চলছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র সিয়াম সাধনার রমজান মাস। পবিত্র এই মাসে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্ট অর্জন ও ধনী-গরিবদের বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করছে সামাজিক সংগঠন ‘সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য’। রাজধানী ঢাকার বাসাবো এলাকায় অসহায়, ভিক্ষুক, ভ্রাম্যমাণ পথিক ও রোজদার মানুষদের জন্য প্রতিদিন ইফতারের আয়োজন করেছে সংগঠনটি। পুরো রমজান মাসজুড়েই চলবে তাদের এই আয়োজন।
সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে প্রতিদিনের বাজার, রান্না থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল কাজ করা হয়ে থাকে। পবিত্র এই মাসে অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে পেরে আনন্দিত তাঁরা।
প্রতিদিনের ইফতারির মেন্যুতে আছে খেঁজুর, ঠান্ডা শরবত, ডিম ও খিচুড়ি। তৃপ্তি সহকারে নিন্ম আয়ের অনেক মানুষ এখানে ভীড় জমান পেটভরে ইফতারি করার জন্য। তবে ডিম-খিচুড়ির বাইরেও অন্য খাবারের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি।
সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের প্রধান স্বেচ্ছাসেবক আমিমূল এহসান খান আহাদ বলেন, “গত রমজান মাসেও আমরা ইফতারের আয়োজন করেছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় এইবারও আয়োজন করছি। খেটে-খাওয়া মানুষ, ভিক্ষুক, ভ্রাম্যমাণ রোজদার সকলেই শরীক হচ্ছে আমাদের এই আয়োজনে”
আমিমূল এহসান খান আরও বলেন, “রমজানের শেষ দশদিন বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো। তখন হয়ত প্রতিদিন দুই-আড়াইশ মানুষের জন্য খাবার রান্না হবে। ঈদের দিন গরীব মানুষদের জন্য বিশেষ এক আয়োজনের মাধ্যমে আমরা এইবারের আয়োজন শেষ করতে চাই।”
মো. সোহেল মিয়া পেশায় একজন রিক্সাচালক। সারাদিনের ট্রিপশেষে প্রতিদিন ইফতারি করতে আসেন এখানে। ডিম-খিচুড়ি হাতে নিয়ে মাগরিবের আজানের অপেক্ষায় থাকাবস্থায় সোহেল বলেন, “দুপুর থেইকা রিক্সা চালাইতেছি। এখন এইখানে আইছি মামাদের সাথে ইফতারি ধরতে। উনাগো রান্না খুব ভালো হয়। পেট ভইরা ইফতারি করবার পারি।”
ইফতারি খেতে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব রহিমা বানু। ভিক্ষা করে যা আয় হয়, তা দিয়ে তেমন ইফতারের ব্যবস্থা করতে পারেন না তিনি। সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের ইফতার আয়োজনে এসে তিনি বলেন, “আল্লায় রিজিক রাখছে তাই এইহানে আইসা খাইতেছি। আমাগো এত সামর্থ্য কই যে দামী ইফতারি কিইন্না খামু? তাও তো উনাগো লাইগা একটু খিচুড়ি খাইতে পারতাছি!”
আয়োজনের সাথে যুক্ত আছে টোকাই সমিতি, উইফোরআস বাংলাদেশ এবং নাইনসিক্স-নাইনএইট ফাউন্ডেশন।
টোকাই সমিতির বাংলাদেশ শাখার প্রধান স্বেচ্ছাসেবক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের এই আয়োজনে সাথে থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত। পবিত্র রমজান মাসে রোজাদার ভাইয়েরা আমাদের মাধ্যমে ইফতার করতে পারবে, এর থেকে আনন্দদায়ক বিষয় আর নেই।”
প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয় স্বেচ্ছাসেবকদের রান্নার আয়োজন। চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এরপর গরম গরম খাবার হাজির করা হয় ইফতারির স্পটে। তবে তার আগ থেকেই এখানে জড়ো হতে থাকে রিক্সাচালক, ভিক্ষুক ও অসহায় মানুষেরা।