ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রস্তাবিত শুল্ক চীনের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নয়, বরং প্রতিযোগিতার ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, এমনটাই জানিয়েছেন জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হাবেক। তিনি বলেন, এই শুল্কগুলি চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর আরোপিত হবে, যেগুলি অতিরিক্ত ভর্তুকি পেয়ে ইউরোপীয় বাজারে অনিয়মিত প্রতিযোগিতা তৈরি করছে।
ইইউ সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর ১৭ থেকে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবে। এই শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের ভর্তুকি দেওয়া, যা ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা কমিয়ে দেয়।
জার্মানির গাড়ি শিল্পের নেতারা এবং কারখানা মালিকরা এই শুল্কগুলির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এই শুল্কগুলি ইউরোপের পরিচ্ছন্ন মোবিলিটি এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের রূপান্তর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। ভেরবান্ড দের অউটোমোবিলইন্ডাস্ট্রি (VDA) এবং বুন্ডেসভারব্যান্ড দের এনার্জি- অন্ড ওয়াসারউইর্টশাফট (BDEW) এর প্রেসিডেন্ট হিল্ডেগার্ড মুলার এবং কেরস্টিন আন্দ্রেয়া বলেছেন, “শুধু খোলা, বৈশ্বিক বাজারের মাধ্যমেই অর্থনৈতিক স্কেলগুলির সুবিধা নেওয়া সম্ভব এবং এর ফলে আরও বেশি ই-গাড়ি রাস্তায় নামানো যাবে”।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা ইইউর এই পদক্ষেপকে ‘নগ্ন সংরক্ষণবাদী আচরণ’ হিসেবে দেখছে এবং তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মাধ্যমে প্রতিকার চাইবে। চীন হুমকি দিয়েছে যে, তারা ইউরোপীয় কৃষি পণ্যের ওপর প্রতিক্রিয়া শুল্ক আরোপ করতে পারে। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবিত শুল্কের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, “আমরা এই শুল্কগুলিকে শাস্তিমূলক হিসাবে দেখছি এবং আমরা উপযুক্ত পদক্ষেপ নেব।”
এই প্রসঙ্গে জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হাবেক বলেছেন, “এই শুল্কগুলি কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নয়, বরং প্রতিযোগিতার ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল ন্যায্য বাজার প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিযোগিতার সমতা বজায় রাখা।”
এই পরিস্থিতিতে হাবেক চীন সফর করছেন, যেখানে তিনি চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। তাঁর উদ্দেশ্য হল জার্মানির অর্থনৈতিক নীতি বোঝানো এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ খোঁজা। তবে, তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, এই আলোচনার মূল লক্ষ্য হবে ইইউ-চীন বাণিজ্য বিরোধের মূলে পৌঁছানো এবং সমাধানের পথ খোঁজা।
জার্মানির অর্থনীতির ওপর চীনের প্রভাব বিবেচনায় রেখে হাবেক চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চান, কিন্তু একই সঙ্গে চীনের অতিরিক্ত ভর্তুকি এবং বাজার বিকৃতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করতে চান।