পথশিশুদের অধিকার রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পথশিশুদের সেবার সমন্বয় তত্ত্বাবধানের লক্ষ্যে একটি ক্রস-সেক্টর বডি গ্রহণ করতে হবে। সমন্বয়হীনতার কারণে এ কার্যক্রমের প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য দিকে পথশিশুদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। যাদের ৮৫ শতাংশই মাদকাসক্ত। বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডির ঢাকা আহছানিয়া মিশনের প্রধান কার্যালয়ে ‘নেটওয়ার্কিং বিল্ডিং অ্যামং অ্যাক্টরস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন। তারা বলেন, পথশিশুদের জন্য টেকসই ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের সংখ্যা নির্মূলে আঞ্চলিক পর্যায়ে কাজ করতে হবে। সরকার গৃহীত ও বেসরকারি সেবাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন সাপেক্ষে একটি ডাটাবেজ করতে হবে।
বক্তারা বলেন, পথশিশুদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তাদের জন্য জাতীয় পর্যায়ে জরুরি হটলাইন নম্বর চালু করা দরকার এবং স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পিতৃ-মাতৃহীন পথশিশুদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিজ-পরিচয়ে জন্মনিবন্ধনের সুপারিশ করা দরকার। সকল শিশুর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পথশিশুদের মৌলিক অধিকার আদায়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। নগরায়ন, নদীভাঙন, বিবাহ বিচ্ছেদ, দরিদ্রতা ও বাল্যবিবাহসহ পথশিশু সৃষ্টির কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে একটি জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে স্ক্যান বাংলাদেশের সেক্রেটারি মো. মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, ৯৪ শতাংশ শিশু শারীরিক নির্যাতনের শিকার, ৭৭.৯ শতাংশের জন্মনিবন্ধন নেই এবং মাদকাসক্ত হলো ৮৫ শতাংশ পথশিশু।
অনুষ্ঠানে বক্তারা মেয়ে পথশিশুদের রাতযাপনের নিশ্চয়তার বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে বলেন, মেয়ে শিশুরা দিনের বেলা বিভিন্ন স্থানে থাকতে পারলেও রাতযাপন অনেক কঠিন হয়ে যায়। প্রায় সব মেয়ে পথশিশুই কোনো না কোনোভাবে এ সময় যৌন হয়রানির শিকার হয়।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে ও স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক (স্ক্যান) বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক ড. এম এহছানুর রহমান, অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা রশিদা বেগম, মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের উপপরিচালক ফাতেমা জহুরা, সমাজসেবা কর্মকর্তা (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) কে এম আবু রায়হান, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের শিক্ষা সেক্টরের যুগ্ম পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান, স্ক্যানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. এম আফতাবুজ্জামান ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের কাপ-আপ প্রকল্পের মো. মোদাচ্ছের হোসেন। আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক ড. এস এম খলিলুর রহমানের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার নাজনীন শবনম। এ ছাড়াও গোলটেবিল বৈঠকে ২০টি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।