সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে মাঠ গোছাতে শুরু করেছে বিএনপি। এরই মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে মাঠে নামছেন তারা। তবে বিএনপির আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরালো করছে দলটি। ফলে বিএনপির আন্দোলন তৃণমূল পর্যায় থেকে মোকাবেলার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, রাজনৈতিকভাবে একটি ব্যার্থ দলে পরিণত হয়েছে বিএনপি। বিভিন্ন ভূল সিদ্ধান্তে কারণে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তবে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সক্রিয় হতে চায় দলটি। তারা এখন আন্দোলনের জন্য ইস্যু খুজছেন। এরই মধ্যে তাদের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাড়নো একটি ষড়যন্ত্র হতে পারে। তাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতা জানান, রাজপথ অস্থিতিশীল করতে মরিয়া বিএনপি। তারা এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাজপথ উত্তপ্ত করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিয়েও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ষড়যন্ত্র করছে। তবে তাদের আর কোন ছাড় দেয়া হবে না। তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে।
সম্প্রতি রাজপথে ব্যাপক আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে বিএনপি। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির সমাবেশের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। ওই সময় পুলিশের লাঠিপেটা চলাকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পুলিশের লাঠিপেটায় সমাবেশ ছত্রভঙ্গ হয়।
পুলিশ বলছে, এতে তাদের অন্তত আট সদস্য আহত হয়েছে। অন্যদিকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবের সামনেও ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। এতে বিক্ষোভ সমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়। তবে ওই দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ নেতাকর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করে। জবাবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোঁড়েন। আশপাশে ভাঙচুরও করেন।
মঙ্গলবার রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ। সেখানে অংশ নেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, যে মানুষের চলার কোনো শক্তি নাই, সে যদি কাউকে মারার কথা বলে তাহলে তাকে করুণা করা ছাড়া বলার কিছু নাই। বিএনপির অবস্থা হয়েছে তাই। বিএনপির যে মূল নেতা তারেক রহমান এ দেশ থেকে ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে লন্ডনে বসে আছেন, আর তারেকের মা খালেদা জিয়া চুপচাপ ঘরে বসে আছেন। আমরা বুঝে পাই না, যাকে বিএনপির চালিকা শক্তি বলা হচ্ছে, সেই খালেদা জিয়া যেখানে ঘরে চুপচাপ বসে আছেন, বাইরে বের হচ্ছেন না, তার দলের নেতাকর্মীরা বাইরে বের হয়ে আর কী করতে পারবেন?
তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশি আস্ফালন করলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না। অতীতে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের ভূমিকা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আজকে যে বিএনপির সমাবেশ হচ্ছে, সেই সমাবেশ থেকে ধ্বংসাত্মক কিছু করার চিন্তাভাবনা যদি তারা করে, তাহলে তাদের প্রতিহত করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই যথেষ্ট।
একই দিনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে ‘অছাত্র ও গুন্ডাদের সংগঠন’বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান। তিনি বলেন, বিএনপি জোটের আমলে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদী দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বিএনপির নেতৃত্বে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তখন লোডশেডিং ছিল। এখন আমরা জানতেও পারি না কখন লোডশেডিং হয়। করোনা মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যখন হিমশিম ও হোঁচট খেয়েছে, সেই সময়ে বাংলাদেশে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রেখে করোনো মোকাবিলায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা এখন সারা পৃথিবীতে একটি আশ্চর্য।
শেখ হাসিনা যখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি পেয়েছেন, তখন একটি পক্ষের চুলকানি শুরু হয়ে গেছে। তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কারণ, তারা সরকার হটানোর দিবাস্বপ্ন দেখেছিল। এত সহজ নয়। এই দেশে পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা স্থান পাবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ আছে।
ছাত্রলীগ সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, ‘আজকে জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা বিভিন্ন জায়গায় মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাদের ও ছাত্রদলের গুন্ডাদের উদ্দেশে বলতে চাই, গুন্ডামি করে লাভ নেই। ছাত্রলীগ মাঠে আছে। দুদিন আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ছাত্রদলের গুন্ডারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর বাঁশ দিয়ে অতর্কিত হামলা করেছিল। ছাত্রদলের গুন্ডাদের বলতে চাই, আপনারা অছাত্রদের সংগঠন৷ অছাত্রদের এই সংগঠনকে আমরা আর কোনো ধরনের অরাজকতার সুযোগ দেব না।’
বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, যে দলের জন্ম হয়েছে ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে তারা আর যাই করুক ভালো কিছু করতে পারে না। তাদের আন্দোলনের ফাকা বুলি বছরের পর বছর চলে আসছে, আর আন্দোলন হয় না। তাদের আন্দোলনের কোন ইস্যুই নেই। তারা ষড়যন্ত্রই করতে জানে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বন্ধুর পথ অতিক্রম করছেন। তার বিরুদ্ধে বহুবার ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং হচ্ছে। আমরা সব সময়ই সতর্ক আছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কর্মীরা যে কোন চক্রান্তের বিরুদ্ধে সব সময়ই সতর্ক। তাদের রাজনৈতিকভাবে সকল অপকৌশল জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবেলা করা হবে।