বিডি এক্সপ্যাট মালয়েশিয়া সংগঠনটি প্রতিষ্টার পর থেকে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনে মালয়েশিয়ায় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে লালন করে চলেছে। উদ্দেশ্য নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা, পণ্য ও বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিদেশে তুলে ধরা। অন্য এক বাংলাদেশকে পরিচিতি দেওয়া।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পরিচিতি সাধারণ কর্মী কেন্দ্রিক, কিন্তু বিভিন্ন উচ্চতর পেশায় দক্ষ বা বিজনেস বা শিক্ষা, প্রকৌশল, গবেষণা, চিকিৎসায়ও বাংলাদেশীরা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় মেধার স্বাক্ষর রেখে উন্নত মালয়েশিয়া বিনির্মাণে জড়িত রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের দক্ষ ও মেধাবী পদচারণা রয়েছে।
শুরুতে মুশফিকুর রহমান রিয়াজের উপস্থাপনায় উঠে আসে ২০১৬ সালের ১০ জনের গ্রুপ নিয়ে টুইন টাওয়ারের পাদদেশ থেকে যাত্রা শুরু করে এ পর্যায়ে এসেছে। আয়োজন করে বাংলাদেশের নানান জাতীয় দিবস, ঈদ পুনর্মিলনী এবং সদস্যের সহজ প্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন তথ্য। জানালেন এবারের করোনা মহামারীর সময় নিজস্ব উদ্যোগে প্রবাসীদের সহায়তা প্রদানের কথা।
এভাবে নিজস্ব উদ্যোগে বাংলাদেশি এক্সপ্যাটরা দেশকে ব্রান্ডিং করে চলেছেন। চলমান মহামারি করোনায় সব কিছুতে স্থবিরতা বিরাজ করলেও বাংলাদেশি এক্সপ্যাটরা দেশিয় সাংস্কৃতি ও পণ্য প্রচারে উদ্যোগ নিলেন ভার্চুয়াল মেলার। সপ্তাহ জুড়ে অনলাইনের মাধ্যমে চলে প্রচার প্রচারনা। এ ব্যতিক্রমি উদ্যোগকে প্রবাসীরা স্বাগত জানিয়েছেন। ৩০ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হয় ভার্চুয়াল মেলা। চলে রাত ১০ টা পর্যন্ত। মেলায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী মালিকানাধীন ২৫ টির অধিক প্রতিষ্টান অংশ নেয়। মেলার উদ্বোধন করেন, দেশটিতে নব নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো: গোলাম সারোওয়ার।
রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে চলছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ হবে। তিনি বলেন এ উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার অবারিত সুযোগ এখন বিরাজ করছে এবং এই সুযোগ অনিবাসি বাংলাদেশিরা গ্রহণ করতে পারেন। চীনের প্রবাসীদের নিজ দেশে বিনিয়োগে উন্নতির চিত্র তুলে ধরে বলেন যে, চীনের প্রবাসীদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে নিজ দেশেও বিনিয়োগ করা যায়। বিডি এক্সপ্যাট গ্রুপ সে ক্ষেত্রে নিজেরা বিনিয়োগ এবং মালয়েশিয়ান বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে মূল গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ সরকার স্পেশাল ইকোনমিক জোন করেছে যেখানে প্রবাসীরা যৌথ বা এককভাবে বিনিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশে এখন সেবামূলক , উৎপাদন এবং কারিগরি শিল্প সম্প্রসারণ করছে সেগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রবাসে নিজ দেশের সংস্কৃতি চর্চা করার সুযোগ খুবই সীমাবদ্ধ, এই সীমাবদ্ধতাকে কিছুটা হালকা করে এ ধরনের সম্মিলিত উদ্যোগ। শুরু অল্প পরিসরে হলেও ক্রমশঃ ব্যাপক হবে, যেমন অন্যান্য জাতি বা দেশের প্রবাসীরা করেছে। সে ক্ষেত্রে হাইকমিশন সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পেলে প্রবাসে বসবাস সুখকর হয়। বাংলাদেশীদের দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা এবং সহযোগিতা মূলক আচরণ বিশেষভাবে প্রশংসিত। তথাপি কতিপয় আচরণ আমাদের লজ্জায় ফেলে দেয় এসব থেকে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং যায় যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। করোনা মহামারীর মধ্যেও দূতাবাসের কাজ চালু রাখা প্রবাসীদের সেবাদেওয়া এবং কর্মীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়োগ কর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করার উল্লেখ করে বলেন, যে কোন ভালো উদ্যোগের সাথে দূতাবাসের সহযোগিতা আছে এবং থাকবে। তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মোঃ আলমগীর জলিল, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক মালয়েশিয়ার চিফ অপারেটিং অফিসার আরশাদুল হাসান, ড. তারিক এবং অসীম বক্তব্য দেন। বক্তারা সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দেশীয় সংস্কৃতি, খাদ্য, ভাষা ইত্যাদি শেখার এবং দেশীয় পণ্য প্রাপ্তির মাধ্যমে তাদের দেশের জন্য গড়ে তোলার সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর প্যানেল আলোচনা হয় সেখানে মালয়েশিয়ার কাজ, দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যবসা করার সুযোগ, দেশে বিনিয়োগ করা, কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা হয়। প্রবাসীদের সম্মিলিত প্রয়াসে করোনা মহামারীর সময় হাইকমিশনের সর্বাত্মক সহযোগিতায় আটকে থাকা বাংলাদেশীদের দেশে প্রেরণ করার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে আলমগীর জলিল বলেন, ভালো উদ্যোগ নিলে অবশ্যই হাইকমিশন শুধু পাশে থাকে না পুরো ভারই বহন করে।
অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ব্যাংক রেমিটেন্স হাউজ নিজেদের সম্পর্কে তুলে ধরেন কিভাবে হিসাব খোলা, প্রবাসে সঞ্চয় করা ও দেশে যাবার সময় কিছু সঞ্চয় নিয়ে যাওয়া, বৈধ পথে অর্থ প্রেরণ, প্রবাসী বন্ড ক্রয় করা অর্থাৎ আর্থিক নিরাপত্তা বিষয়ে বিশদ তুলে ধরেন । তরুণ ও নতুন প্রজন্মকে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান আহরণ করার সুযোগ সম্পর্কে তুলে ধরেন পাভেল সরোয়ার। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের পন্য সম্পর্কে ভিডিও প্রদর্শন করে। এসময় ১২ হাজারের অধিক দর্শক মেলাটি ভার্চুয়ালি ভ্রমণ করে।