রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে এক মাদরাসা ছাত্রীকে (১৬) প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া মাত্র ২৫ হাজার টাকায় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসান আলীসহ প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে বিষয়টি রফাদফা করারও অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার সোনাপুর (পোড়াপাড়া) গ্রামের ইয়াকুব সরদারের ছেলে মিঠু সরদার ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
করোনাকালে চাকরি হারিয়ে এলাকায় অবস্থানকালে মুঠোফোনে একই এলাকার এতিম মাদ্রাসা ছাত্রীর সাথে মিথ্যের প্রেমের অভিনয় করে দীর্ঘদিন আলাপের সুত্রে কৌশলে কিশোরীকে বাড়ির বাহিরে নিয়ে আসে। সারাদিন এখানে সেখানে ঘুরিয়ে বিভিন্ন অযুহাতে রাতে নিজের কাছে রেখে কিশোরীকে ধর্ষণ করে মিঠু সরদার। সকালে বাড়ির লোকজন কিশোরী মেয়েটি দেখে বিভিন্ন প্রশ্ন করে এবং প্রচন্ড মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চেষ্টা করলে কিশোরী মেয়েটি ধর্ষকের বাড়ি থেকে যেতে না চাইলে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টাকালে মেয়েটির গগনবিদারী চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে এবং পানি ঢেলে শরীরের আগুন নেভায় ।
ততক্ষণে এতিম কিশোরীর পরনের পোশাকসহ শরীরের অনেকাংশ পুড়ে যায়। একপর্যায়ে ধর্ষকের চাচা আব্দুল খালেক সরদার ও এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ইলিয়াস সুবিচারের মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে সুকৌশলে এতিম মাদ্রাসা ছাত্রীকে তার নানা বাড়িতে ফেরত পাঠায়। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর এ ঘটনা ঘটার পর থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে এসআই ওয়াহিদুজ্জামান ইউপি চেয়ারম্যানকে স্থানীয়ভাবে সমাধান করার নির্দেশনা দেন। নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসান আলীর সভাপতিত্বে চেয়ারম্যানের নিজবাড়ীতে গত ৩ জানুয়ারি সালিশ বৈঠক হয়।
উক্ত সালিশ বৈঠকে ধর্ষিতা এতিম মাদ্রাসা ছাত্রী ও ধর্ষক মিঠু সরদার উভয় পক্ষের অভিভাবকের উপস্থিতিতে সালিশের মূল বিষয় অস্পষ্ট রেখে চেয়ারম্যানসহ ৪ জন সালিশ নামায় স্বাক্ষর করে ধর্ষককে মাত্র ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে সালিশ সমাপ্ত ঘোষণা করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসান আলী। এবং ধর্ষিতার নানাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে জরিমানার ২৫ হাজার টাকা নিতে বাধ্য করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
কিন্তু কি বিষয়ে সালিশ তা উক্ত সালিশ নামায় উল্লেখ নেই। চেয়ারম্যানের এমন বিচারের ধর্ষিতা এতিম ছাত্রীসহ এলাকাবাসী ক্ষেভে ফেটে পরেন। কেউ কেউ বলেন সালিশের নামে মোটা অংকের টাকা কামানোই চেয়ারম্যান আলীর নেশা। গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পেরে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে নিজে উপস্থিত থেকে সালিশ করেছেন তা অস্বীকার করেন চেয়ারম্যান আবুল হাসান আলী । অথচ কথিত সালিশ নামায় চেয়ারম্যানের স্পষ্ট স্বাক্ষর রয়েছে। এতেই চেয়ারম্যানের দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে।
সোনাপুর সমাজ পরিবেশ রক্ষা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব প্রভাষক সাইফুল ইসলাম জানান ইউপি চেয়ারম্যানের ধর্ষণের বিচার করার এখতিয়ার নেই। সোনাপুর সমাজ পরিবেশ রক্ষা নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও বালিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংঠনিক সম্পাদক মোঃ মতিয়ার রহমান জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন এবং তিনি দুঃখপ্রকাশ বলেন একটি এতিম মেয়ের সাথে এমন অবিচার করা কিছুতেই উচিত হয়নি।
বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, এ বিষয়ে থানায় কোন মামলা হয়নি। ভুক্তভুগীরা মামলা করতে চাইলে মামলা নেয়া হবে। এবং আসামী যতো প্রভাবশালী হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। অথচ এসআই ওয়াহিদুজ্জামান মামলা না নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমাধানের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসান আলীকে নির্দেশনা দেন!