ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশির দশকের কিছু ছাত্রদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘টোকাই সমিতি’ নামের সংগঠন। ছাত্রাবস্থায় গরীব-অসহায়, ভাসমান মানুষদের জন্য কিছু করার লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সংগঠনটি।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বাংলাদেশের বিজয়ের ৫০ বছর উপলক্ষে ভাসমান টোকাইদের, বস্তিবাসীদের শীতের কাপড় ও খাবার বিতরণ করেছে টোকাই সমিতি। সেই সাথে, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিতরণ করা হয়েছে মাস্ক, লিপজেল ও সাবান।
আশির দশকে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনেকেই এখন অবস্থান করছেন বিদেশে। তাদের প্রেরিত অর্থের মাধ্যমেই এবারের শীতে এমন আয়োজন করেছে টোকাই সমিতি।
শীতের কাপড় দেওয়া হবে জানতে পেরে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। যারা স্টেশনের আশেপাশে রাস্তায় থাকে, সেখানেই ঘুমায় – এমন নারী, শিশু-কিশোররা শীতের কাপড় পেয়ে আনন্দিত হয়েছেন।
টোকাই সমিতির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মো. মুস্তাফিজুর রহমান জুয়েল বলেন, “বিভিন্ন সময়ে টোকাই সমিতি অসহায় শিশুদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেছে। আজকে আমাদের দেশী ও বিদেশী বন্ধুদের সহায়তায় কমলাপুর স্টেশনে ভাসমান শিশু-কিশোর ও নারীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের ব্যবস্থা করেছি।”
তিনি মনে করেন, দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাঙ্গালীরা এগিয়ে আসলে দেশ থেকে টোকাই নামক মানুষগুলোর পুর্নবাসনের ব্যবস্থা হবে।
জুয়েল বলেন, “সারা দেশ-বিদেশে অসংখ্যা বাঙ্গালী রয়েছে যারা অর্থনৈতিক ভাবে বিত্তবান। টোকাই সমিতি বিশ্বাস করে, তারা এক হলেই এইসব অসহায় শিশুদের কষ্ট কমবে৷ তাদের পূর্ণবাসন হবে।”
আগে শীতের রাতে কষ্ট করে ঘুমাতে হতো টোকাই সুমনকে। নতুন জামা পেয়ে শীত নিবারণ করতে পারায় আনন্দে শিশু সুমন বলে, “আমরা কুলিগিরি, লেবারি কইরা, কেউ টুকাইয়া খায়। আপনাদের তরফ থেকে যে একটা জ্যাকেট পাইছি, খাবার পাইছি এইজন্য আমি অনেক কৃতজ্ঞ। আপনাদের ধন্যবাদ”
জীবন নামের আরেক শিশু বলে, “ভালো লাগতেছে ভাই। খাদ্য পাইছি। বস্ত্র পাইছি। সাবান পাইছি। আরও অনেক ধরণের জিনিস পাইছে। এতে আমাগোর অনেক উপকার হইলো”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলো আরেক সামাজিক সংগঠন সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য। এ সংগঠনের প্রধান স্বেচ্ছাসেবক আমিমূল এহসান খান আহাদ বলেন, “শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য টোকাই সমিতি আজ অসহায়-সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ করেছে। এই মানুষগুলো নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। আমরা চাই, তারা অন্যান্য মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক। কারণ কেউই চায় না এইভাবে বেচে থাকতে, বড় হতে।”
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হোস্টেল বানিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের টোকাইদের পুর্নবাসন করার পরিকল্পনা করছে টোকাই সমিতি। যেখানে তারা বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।