নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততোই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ঝিনাইদহের ভোটের মাঠ। ইতোমধ্যে ভোটের প্রচারণাকে কেন্দ্র করে হত্যাসহ দফায় দফায় হামলা পাল্টা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহতসহ কমপক্ষে শতাধিক আহত ও ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল হাই নির্বাচনী আচরণ বিধি ভেঙে প্রতিদিনই প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের সভা সমাবেশ করছেন। এতে ভোটের মাঠে উত্তেজনা বাড়ছে।
আগামী ৫ জানুয়ারি জেলার শৈলকুপায় ১২ ইউনিয়ন এবং হরিণাকুন্ডু উপজেলার আট ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট নিয়ে প্রতিদিনই এ দুই উপজেলার কোনো না কোনো স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ফলে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এসব উপজেলার ভোটার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।
যদিও জেলা পুলিশ সুপার ও নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে শুক্রবার হত্যার ঘটনার পর থেকে সেখানে উত্তেজনা রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার তার সবই করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে হারান বিশ্বাস (৬০) নামে একজন নিহত হয়েছে। এ সময় আরো অন্তত ২০ জন আহত হন।
একই দিন ভোরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত স্বপন শেখ (৩৫) নামে এক যুবক ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত স্বপন শৈলকুপার কবিরপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ শেখের ছেলে।
যদিও শৈলকুপা পৌরসভা এলাকায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ১৭ ডিসেম্বর দু’গ্রুপের হামলায় স্বপনসহ প্রায় ৫ জন আহত হন। একই দিন উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়নে ভগবাননগর গ্রামে নৌকা প্রতীক পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা চলছে।
এ ঘটনার ২২ ঘণ্টার ব্যবধানে নির্বাচনী সহিংসতায় আবারও জসিম (৩৫) নামে আরও একজনকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের ভাটবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। নিহত জসিম ভাটবাড়িয়া গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে।
এদিকে ভোটের তফসিল ঘোষণার পর থেকে স্থানীয় এমপি মো. আব্দুল হাই নির্বাচনী আচরণ বিধি ভেঙে প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ভোটের সভা সমাবেশ করছেন। ফলে সংঘর্ষে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
যদিও সংসদ সদস্য মো. আব্দুল হাইকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। ২৮ ডিসেম্বর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুস ছালেক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি জারি করা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণা করার অভিযোগ সুনির্দিষ্ট করেছে, যা নির্বাচনি আচরণবিধির পরিপন্থী।
এছাড়া গত ১২ ডিসেম্বর বিকালে জেলার শৈলকুপা উপজেলার ওমেদপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকার প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবদার হোসেন মোল্লা প্রায় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলসহ শোডাউন করে। এসময় মোটরসাইকেল আরোহীদের সবাই বড় বাশেঁর লাঠি বহন করতে দেখা যায়। এ ঘটনার পর এলাকার প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে জেলা নির্বাচন অফিসার মোহা. আব্দুছ ছালেক জানান, নির্বাচনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু গতকালের ঘটনাটি ঘটার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। এসব ঘটনা আমরা উপর মহলকে লিখিতভাবে জানাচ্ছি। নির্বাচনের দিন অতিরিক্ত পুলিশ ও অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন রাখা হবে।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, শৈলকুপার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যার মার্ডারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তবে আমাদের সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি আর যাতে কোনো ঘটনা না ঘটে। এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিজিবি-পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যান্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।