ধন সম্পদের পেছনে না ছুটে জ্ঞানার্জন করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, সম্পদ কোনো কাজে আসে না, একমাত্র জ্ঞানই কাজে লাগে।সোমবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি কেআইবি মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যা অর্জন করলে জীবনে কখনও হোঁচট খাবে না।…এখন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ তাই বসে না থেকে হাতের কাছে যা পাও পড়ে ফেল। পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি যত পার জ্ঞানার্জন কর। যতই জ্ঞান অর্জন করবে ততই বড় হবে।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘করোনা আমাদের শিখিয়েছে বাড়ি-গাড়ি কোনো কাজে আসে না। বিদ্যা এমন এক সম্পদ যা কেউ কখনও কেড়ে নিতে পারবে না। জ্ঞান অর্জন করলে জীবনে কখনও হোঁচট খাবে না।’
নিজ এলাকায় নিরক্ষরদের পড়তে-লিখতে শেখাতেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদেরকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘পরিবারে বা প্রতিবেশীদের ঘরে শিক্ষার্থী থাকলে তাদের পড়াশোনাতেও সহযোগিতা কর। ছাত্রলীগের মূলনীতির এক নম্বর হচ্ছে শিক্ষা। এটা মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ চলতে হবে। আদর্শ নিয়ে না চলছে জীবনে বড় হতে পারবে না। নিজেদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ কর। ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ধরে রেখেই সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে।’
করোনার সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকার প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘করোনার মধ্যে ছাত্রলীগ অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। যখন তাদের যে কথা বলেছি, সব রেখেছে। করোনা আক্রান্তদের ফেলে যেখানে মানুষ চলে যাচ্ছিল, সেখানে আমার ছাত্রলীগের ছেলেরা পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজও করেছে ছাত্রলীগ। আমি সত্যিই গর্বিত। যখন ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা সংকটে পড়ল, তখন ছাত্রলীগ নেমে পড়ল ধান কাটতে। তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যে কোনো কাজই ছোট না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস। বাঙালির ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস। আজ আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি এর প্রতিটি সংগ্রামে কিন্তু ছিল ছাত্রলীগ। বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ গড়ে তোলেন। এদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ যে কোনো সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছে ছাত্রলীগ।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের পরিস্থিতি বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর, জিয়া যখন রাষ্ট্রপতি হলো, তার প্রথম কাজ ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা। প্রথমে প্রলোভন দিয়ে দলে টানা, আর না হলে চলত হত্যা-নির্যাতন। অনেকের লাশও আত্মীয়রা পায়নি।’
বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ, উন্নত জীবন দিতে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্যই তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।ডিজিটাল বাংলাদেশ করা, ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড লাইন স্থাপন, করোনার মতো কঠিন সময়ে সারাদেশে বই বিতরণ, উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা চালুর কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমরা পিছিয়ে থাকব কেন? চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।’
কৃষির পাশাপাশি শিল্পায়নেও বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারে আসার পর বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এর পেছনের লক্ষ্য একটাই, কর্মসংস্থান। আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও আমরা অনেকটাই বাড়াতে পেরেছি।’
কয়েকটি গণমাধ্যমের সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কিছু পত্রিকা আছে, যতো ভালো কাজই করো, তা কখনও লেখে না। অথচ কোথাও একটু খুঁত পেলে সেটা বড় করে ধরে। এটা তাদের মানসিক দৈন্যতা।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সারাদেশের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান সাংগঠনিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
শিক্ষা শান্তি প্রগতির ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গণভবন প্রান্ত এবং কেআইবি মিলনায়তনে প্রান্তে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ ছাড়া মঞ্চে ১৯৮১ সাল থেকে বিগত সময়ে সাবেক হওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সঞ্চালনা করেন। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।