দেশের সরকারি হাসপাতাল গুলো রোগীকে অনেকটা জিম্মি করে পরিবারকে মানুষিক চাপে রাখে , সুস্থ সেবার কোন বালাই নাই , কোথায় যাবে মানুষ? দেখার কেউ নাই ! খুব দুঃখের সাথে জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল ডিবিসি নিউজের ব্রডকাস্ট সাংবাদিক ও সবার প্রিয় নিউজ উপস্থাপক মজুমদার জুয়েল নিজের ফেইসবুক পেজে সরকারি হাসপাতালের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেছেন। যা হুবহু তুলে ধরা হলো :
মজুমদার জুয়েল নিজের ফেইসবুক পেজে লেখা ছবি
সরকারি স্বাস্থ্য সেবা ও কিছু জিজ্ঞাসা!
চিকিৎসক এক বড় ভাইয়ের অনেক বড় অপারেশন হবে। হিপ রিপ্লেসমেন্ট। বিরাট ঘটনা। অনেক টেনশন। বড় ভাই ভদ্রলোকতো ভয়ে কুঁকড়ে আছেন। যে সমস্যা তাতে অপারেশন ছাড়া গতি নেই। চিকিৎসকের পরামর্শমতো সিদ্ধান্ত হলো পঙ্গু হাসপাতালে হবে অপারেশন। কেন সেখানে, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে গলদঘর্ম ভাইটি।
অবশেষে সেই দিনটি হাজির। বলে রাখা ভালো যিনি অপারেশন করবেন তিনি আবার ঐ বড় ভাইয়েরই কলেজ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যালের জুনিয়র। পরামর্শমতো ভর্তি এবং অপারেশনের দিন এলো। আমরা কয়েকজন খুব সকালে গিয়ে হাজির, মনে ভয় কিন্ত ভয়ে মুষড়ে পড়া ভাইটিকে হাসি মুখে খুব আশ্বস্ত করে নেয়া হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারে। এই তখন থেকেই শুরু খটকা।
ভদ্রলোক নিজে হাটতে খুব কষ্ট পাচ্ছেন কিন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পথ দোতলা থেকে চারতলার ওটিরুম পর্যন্ত তাকে যেতে হলো হেঁটেই। আবার ওটিতে যে গাউনটি পড়ানোর কথা সেটিও পড়িয়ে দেয়া হলো কেবিনেই। বড় ভাইটির চিকিৎসক কন্যাতো এই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে অবাক হওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারলেন না। আমরাও দর্শকইতো! কি করার আছে? এই প্রশ্ন কাকে করবো?
যাই হোক নেয়া হলো অপারেশন থিয়েটারে। চিকিৎসক কন্যাটি বাবার ছবি হাতে নিয়ে দোয়া পড়ছেন। আমরাও সব ভালোর অপক্ষোয়। ওটি থেকে হঠাৎ ডাক রক্ত নিয়ে আসেন। বড় ভাইটির পরম এক বন্ধু ছুটলেন সেদিকে। হন্তদন্ত হয়ে তিনি ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিয়ে ফিরলেন, বলা হলো অপেক্ষা করুন, রক্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসুক। আবারও ধাক্কা, এভাবে রক্তের ব্যাগ হাতে নিয়ে অপেক্ষা কোন স্বাস্থ্যকর অবস্থা!
আবার ডাক, যান টাকা নিয়ে আসেন। পরম বন্ধুটি বললেন, হিপ রিপ্লেসমেন্টে যে কোম্পানির যন্ত্র বসবে তারা এসে হাজির। আগে টাকা তারপর অপারেশন। আবারও দৌড়, আড়াই লাখ টাকার গোছা হাতে গুঁজতেই সে কী তৃপ্তির ঢেকুর! এরিমধ্যে আবার ডাক। বড় ভাইয়ের কন্যাটির হাতে ধরিয়ে দেয় হলো এক গাদা ওষুধের তালিকা। বলা হলো যান, নিয়ে আসেন জলদি। পঙ্গু হাসপাতালের অবস্থান যারা জানেন তাদের ধারণা আছে ফার্মেসির দূরত্ব কতটা?
হাঁপাতে হাঁপাতে মেয়েটি ওষুধপত্র নিয়ে আসতেই ধমক। কেন হেক্সিসল আনা হয়েছে নির্ধারিত কোম্পানির বাইরে? দুটি ওষুধ না পাওয়ায় যাওয়ার খবর দিতেই রীতিমতো ক্ষেপে গিয়ে বলা হলো আগারগাঁয় যান, পাবেন। যাবার সময় আরও কিছু ওষুধপত্রের তালিকাও ধরিয়ে দেয়া হয়।
প্রশ্ন হলো এতোবড় অপারেশন, সেখানে রোগীকে ওটিতে নিয়ে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পর একগাদা ওষুধ কিনতে কয়েকবার কেন পাঠানো হবে? আগে কেন কেনা হয় না? উত্তর দেবে কে? পরিচিত চিকিৎসক, পরিচিত পরিচালক তার ওপর চিকিৎসকের অপারেশন। তারপরও এমন অব্যবস্থাপনা, তাহলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কী হয় বোঝার কোন অভাব থাকেনা। আর অপারেশন পরবর্তী সেবা? কেবিন পরিস্কার করারও লোক পাওয়া যায়না সেখানে সেখানে অন্য সেবার কথা বলা হাস্যকরই বটে।
হায় স্বাস্থ্যসেবা!