পাসপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের। করোনার আগে দ্রুত পাসপোর্ট দিতে পারলেও মহামারির ফলে সৃষ্ট প্রতীক্ষা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রেফতার হওয়া, সময়মত ভিসা নবায়ন করতে না পারা এবং জরিমানা দেয়ায় প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
তবে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ঢাকার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রবাসীদের দ্রুত পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেছে।
এদিকে পাসপোর্টকে কেন্দ্র করে দালালি, প্রতারণা এবং হয়রানির অভিযোগ অনেক পুরাতন। বিপরীতে সেবার উন্নতির প্রচেষ্টা যেন প্রত্যাশার সামান্যই পূরণ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়, পাসপোর্ট করতে দিয়েছে কিন্তু পাচ্ছে না; দালাল টাকা নিয়ে উধাও ইত্যাদি।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাসপোর্টপ্রাপ্তি নিয়েও এমন ঝামেলা বা হয়রানির বাইরে নয়। ইতোপূর্বে সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে। সর্বশেষ আলাদা ভবন নিয়ে পাসপোর্ট সেবা দিচ্ছিল সরকার, করোনার কারণে সেটাও বন্ধ করতে হয়েছে। সেখানে অধিক লোক সমাগমের ফলে যানবাহন ও লোক চলাচলে এবং পরিবেশ নোংরা করা নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে সমাবেশ করতেও দেখা গেছে। সেখান থেকে পুলিশ বেশ কয়েকজন দালালকে গ্রেফতার করে এবং এতে প্রবাসীদের মনে স্বস্তি আসে যে, এখন আর দালালের উৎপাত সহ্য করতে হবে না।
একইভাবে করোনার কারণে অফিসে জনসমাগমে নিষেধ থাকায় ডাকযোগে পাসপোর্টের আবেদন নেয়া শুরু করে এবং পাসপোর্ট ডেলিভারি সরাসরি ছিল কিন্তু অধিক লোক সমাগম আয়ত্তে আনা সম্ভব না হয়নি। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন পাসপোর্ট শাখার স্টাফ আক্রান্ত হয় ফলে মালয়েশিয়া সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি পাসপোর্ট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পরিবর্তে ডাকযোগে পাসপোর্ট প্রদান শুরু করে। ফলে যিনি যে এলাকায় থাকেন তিনি সেখানকার পোস্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট নিতে পারছেন। কিন্তু করোনার কারণে চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় পোস্ট অফিসে গিয়েও পাসপোর্ট নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অপরদিকে অনলাইন পদ্ধতিতে সবাই অভ্যস্ত না হওয়ায় অনেকে বুঝে উঠতে সময় লাগছে এবং অনলাইনে পাসপোর্ট ঢাকা থেকে আসেনি; এখনো পায়নি; দেখাচ্ছে না ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকে। পাসপোর্ট আবেদন করার পর হাইকমিশন পাসপোর্ট অধিদফতরের অনলাইনে কাজ সম্পন্ন করলে ডেলিভারি স্লিপ নম্বর আসে। এরপর এটি দিয়ে ডাক বিভাগের অনলাইন সুবিধা নিয়ে ডাক বিভাগ থেকে বারকোড নিতে হয়, যার মাধ্যমে পাসপোর্ট ডেলিভারি নেয়া হয়।
পাসপোর্ট যেকোনো নাগরিকের আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র। বর্তমানে বৈধদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা এবং অবৈধদের বৈধ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ নিতে পাসপোর্ট আবশ্যক। এরপর অন্যান্য শর্ত পূরণ হলে বৈধতা পাবে কিন্তু পাসপোর্ট ছাড়া আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। তাই আবেদনকারীদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা রয়েছে।
হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক আবেদন হাইকমিশনে আসছে, যা প্রক্রিয়াকরণ করে পাসপোর্ট পোর্টালে আপলোড করতে ২/৩ সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। এরপর পাসপোর্ট ঢাকা থেকে প্রিন্ট করে হাইকমিশনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর আবেদনকারীর চাহিদা অনুযায়ী ডাকযোগে বিতরণ করা হয়। ডাক বিভাগের অনলাইন সিস্টেম ফলো করলে হাইকমিশন জানতে পারে, আবেদনকারী কোথায় আছেন এবং সেই অনুযায়ী পাঠানো হয়। বর্তমানে ডাক বিভাগ সমগ্র মালয়েশিয়ায় ৪০টির মতো শহরে সেবা দিচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ধীরে ধীরে সমগ্র মালয়েশিয়ায় ডাক বিভাগ চালু করা হবে। এজন্য জনবল ও অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া অনলাইন পদ্ধতির সঙ্গে একটি ইউনিক পদ্ধতি চালু করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসীদের দ্রুত পাসপোর্ট দিতে প্রয়োজনীয় সকল পদ্ধতি অনুসরণ ও অবলম্বন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হাইকমিশনে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তাফা ফিরোজ বলেন, সময়মত পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে সকল পদ্ধতি সহজ করা গেলে করোনার সময়েও ভালো সার্ভিস দিয়ে প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব। পাসপোর্ট-কেন্দ্রিক সমস্যার কথা প্রবাসীর পরিবারও বলে থাকে তাই এদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারম্যান এসএম শেকিল চৌধূরী বলেন, করোনা পরিস্থিতি সব কিছু পাল্টে দিলেও সম্ভাবনা এবং সুযোগ রয়েছে, সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। আমি জানি, আগে দূতাবাস দ্রুত সার্ভিস দিয়েছে কিন্তু করোনার কারণে পারছে না। পাশাপাশি প্রবাসী সংগঠনগুলোকে আরও সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে এই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে বলে জানান তিনি।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার গোলাম সারোয়ার বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রবাসীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দূতাবাসের অর্ধেকের মতো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একজন কর্মচারী মারা গেছেন। কিন্তু প্রবাসী ভাই-বোনদের সেবার স্বার্থে দূতাবাস একদিনের জন্যও বন্ধ করা হয়নি। সুতরাং দূতাবাসের প্রতি আস্থা রাখুন এবং মুষ্টিমেয় কিছু সুবিধাবাদীর অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।