বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির যে কারণগুলো দেখানো হয়েছে, তার মধ্যে প্রধান একটি হচ্ছে, প্রবাসী আয়। কাঁচামাল আমদানির খরচ বাদ দিলে তৈরি পোশাক খাতের চেয়ে তিন গুণ বেশি নিট বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে।
সেই সত্তরের দশক থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৬২টি দেশে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১ কোটিও বেশি শ্রমিক গেছেন। তাঁদের অধিকাংশই গেছেন মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। শ্রমিকদের পাঠানো অর্থে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেমন ঘটেছে, তেমনি বেঁচে আছে তাঁদের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ পরিবার। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এই শ্রমিকদের অভিবাসন প্রক্রিয়াকে এখনো নিরাপদ করা যায়নি। এখনো অবসান হয়নি তাঁদের দুর্ভোগ ও বঞ্চনার।
সারা বিশ্বে এই করোনা দুর্যোগের মধ্যে প্রবাসীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে চরম পর্যায়। প্রবাসীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়া’র আয়োজনে “কোভিড ‘১৯ এ প্রবাসীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত আলোচনা ও সম্ভাব্য সমাধান” প্রবাসীদের বিশেষ লাইভ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক (এমপি), প্রফেসর ডা. আবুল বাশার, সাবেক হেড অব মেডিসিন, মাহশা ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া।
আলোচনায় বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়ার পক্ষে থেকে প্রবাসীদের স্বাস্থ্য সেবাদানের জন্য স্বতন্ত্র হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবী তোল হয়।
দেশে বিভিন্ন কোটায় সুযোগ সুবিধা অব্যহত থাকলেও নাই প্রবাসী তথা তাদের পরিবারের জন্য বিশেষায়িত কোন হাসপাতাল, নেই কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জানাগেছে প্রবাসীদের সুবিধার্তে বাংলাদেশ সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে দিয়েছেন ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু এপর্যন্ত তথ্য বলছে মাত্র ১৮ কোটি টাকা ৪৮ জনের মধ্যে দেওয়া হয়েছে।
প্রবাসীদের স্বাস্থ্য সেবাদানের জন্য স্বতন্ত্র হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবী প্রেক্ষিতে সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক (এমপি) প্রবাসীদের এমন দাবি যৌক্তিক বলে মনে করেন। ২০৩৩ সালের মধ্যে আমাদের পেছনে থাকবে সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো—এটা ভাবলে যুগপৎ বিস্মিত ও রোমাঞ্চিত হতে হয়। আগামী ১৫ বছরে বাংলাদেশ ১৭টি দেশকে পেছনে ফেলে যেতে পারে বলে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে, তাকে উড়িয়ে দেওয়ার তো উপায় নেই। কারণ, এই দেশটিই গত ১৫ বছরে টপকে এসেছে তার চেয়ে এগিয়ে থাকা ১২টি দেশকে।
সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক (এমপি) আশ্বাস প্রদান করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছে প্রবাসীদের স্বতন্ত্র হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবী তুলে ধরবো। আমি বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদের সুস্বাস্থ্যর কথা করে প্রবাসীদের স্বতন্ত্র হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিষয় বিবেচনা করবেন।
এ ছাড়াও আলোচনায় ছিলেন ডা: শংকর চন্দ্র পোদ্দার, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মালয়েশিয়া হেলথকেয়ার সার্ভিসেস প্রাইভেট লি:, কাওসার আজম, নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত ও মোঃ আরিফুল ইসলাম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন। মোহাম্মদ আলী, কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়া। অনুষ্ঠানটির টেকনিক্যাল সাপোর্ট ছিলেন মো: মনিরুজ্জামান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়া।