করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দুই বছর ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খুলে দেয়ায় শিক্ষক বদলি কার্যক্রম অনলাইনে আগামী জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষক বদলি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ (আইএমডি)। এ বিভাগের অধীনেই তৈরি করা হয়েছে অনলাইনে বদলির সফটওয়্যার।
আইএমডি বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জানুয়ারি থেকে অনলাইনে বদলি কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে। আবার শুরু করা নিয়ে অনিশ্চয়তাও রয়েছে। কেননা অনলাইনে বদলি কার্যক্রম শুরু করার আগে পাইলটিং করতে হবে, যা হওয়ার কথা ছিল গত মার্চ মাসে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এর আগেও তিন দফায় পাইলটিংয়ের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত পাইলটিং শুরুর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। তাই বলা যায়, জানুয়ারি থেকে অনলাইনে বদলি কার্যক্রম শুরু না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানুয়ারিতেই পাইলটিং শুরু করার বিষয়ে আশাবাদী।
তিনি বলেন, ‘আশা করছি, আগামী জানুয়ারিতে বদলি কার্যক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। এরপর পুরোদমে শুরু হবে বদলি কার্যক্রম।’
একই কথা বললেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমও। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে অনলাইনে বদলির জন্য সফটওয়্যার তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী শিগগিরই পাইলটিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে। পাইলটিংয়ের পর বদলি শুরু হবে।
কবে নাগাদ অনলাইনে বদলির পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হবে- এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বদলি কার্যক্রম শুরু হয় জানুয়ারিতে, চলে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিবছর এ বদলি নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষক বদলির উদ্যোগ নেয়। সেই সময় ২০২০ সাল থেকে অনলাইন শিক্ষক বদলির ঘোষণা দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনলাইনে বদলি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইএমডি বিভাগ থেকে জানা যায়, শিক্ষকরা তাদের শিক্ষক পিন (ই-প্রাইমারি সিস্টেম) ব্যবহার করে ওটিপি অথেনটিকেশনের মাধ্যমে লগইন করে নিজস্ব ইউআই (ইউজার ইন্টারফেস)-এ প্রবেশ করে বদলির আবেদন করবেন।
এরপর আন্ত-উপজেলা, আন্তজেলা, আন্তবিভাগ, আন্তসিটি করপোরেশন এবং বদলির কারণ সিলেক্ট করবেন। এরপর প্রয়োজন অনুসারে স্বামী/স্ত্রীর কর্মস্থলের বা স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র, বদলির কারণ কিংবা প্রেক্ষাপটের আলোকে প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংযুক্ত করবেন।
সঠিকভাবে আবেদন সাবমিট করলে আবেদনকারী আবেদনের একটি পিডিএফ কপি এবং মোবাইলে নোটিফিকেশন পাবেন। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনটি অগ্রসর হতে থাকবে এবং কোনো ধাপে অতিরিক্ত সময় লাগবে না। কারণ সফটওয়্যারে প্রতিটি ধাপে সময় নির্ধারণ করা থাকবে। এরপর যেকোনো সময় শিক্ষকরা পিন ব্যবহার করে লগইন করে যেকোনো সময় আবেদনের বর্তমান অবস্থান জানতে পারবেন।
বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮০ জন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেয়া হয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।