গুলশানের যে বাসায় থাকতেন মোসারাত জাহান মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটটি কে ভাড়া নিয়েছিলেন? কার তথ্য দেওয়া ছিল ‘ভাড়াটিয়া ফর্মে’? অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুলশান-২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়ার ভাড়াটিয়া ফর্মে তথ্য ছিল মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত ও তার স্বামীর। তাদের দুজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি ওই ফর্মের সঙ্গে গেঁথে দেওয়া হয়েছিল। আগাম ভাড়াও পরিশোধ করেছিলেন তারা।
শনিবার বিকালে মুঠোফোন আলাপে নুসরাত নিজেও বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, বাসা ভাড়া নিতে মুনিয়াকে ‘সাহায্য করতে’ তিনি বাধ্য হয়েছিলেন।
মামলার তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারাও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফ্ল্যাট ভাড়ার দুই মাসের অগ্রিম দুই লাখ টাকা ‘মুনিয়ার ব্যাংক হিসাব’ থেকে তুলে এনেছিলেন মুনিয়া ও তার বোন নুসরাত। ভাড়া নেওয়ার জন্য নুসরাত বাড়ির মালিকপক্ষকে জানান, তিনি (নুসরাত), তার স্বামী ও ছোট্ট বোনকে (মুনিয়া) নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকবেন।
নুসরাত জানান, বাড়িভাড়ার জন্য যে টাকা অগ্রিম দিতে হয়েছে এই টাকা দেওয়ার অবস্থা তাদের নেই। মুনিয়ার ব্যাংক হিসাবে কোথা থেকে এলো টাকা, সেই উৎস কি তারা জানতেন? জবাবে নুসরাত দাবি করেন, তিনি এর কিছুই জানতেন না।
বাসাটি তিনি ভাড়া করে দিয়েছিলেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে নুসরাত বলেন, ‘আমি ভাড়া করে দিইনি বা নিইনি। আমি বাসা ভাড়া নিবো কেন? মুনিয়া আমাকে ও আমার হাজবেন্ডকে বাড়িভাড়া নেবার সময় থাকতে বাধ্য করেছিল। বলেছিল আমাকে বাসাটা নিতে হেল্প করো। তাই আমরা ওর (মুনিয়া) সঙ্গে ছিলাম। এসময় আমার ও আমার হাজবেন্ডের ভোটার আইডি কার্ড ভাড়াটিয়া ফর্মের সঙ্গে দিয়েছিলাম। তবে আমরা ওই ফর্মে তখন সই করিনি।’
ভাড়ার টাকা আপনি নিজের ব্যাগ থেকে দিয়েছিলেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘টাকা তো আমার কাছে থাকতেই পারে। হ্যাঁ, আমি দিয়েছিলাম। ও অগ্রিম বাসা ভাড়া দেবার জন্য যখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছিল, তখন আমাকে টাকাগুলো দিয়েছিল। মুনিয়া ‘হ্যান্ডপার্স’ নিয়েছিল। সেখানে তো এতগুলো টাকা রাখার জায়গা হয় না। তাই, আমাকে সেই টাকাগুলো দিয়েছিল। আর এই টাকা মুনিয়ার ব্যাংক হিসাব থেকে ক্যাশ করা হয়েছিল। সেগুলো তার একাউন্টে রাখা হয়েছিল।’ তবে সেগুলো কিসের টাকা বা কোথা থেকে এসেছে তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন।
বাসা ভাড়া ঠিক করা সময় উপস্থিত একটি সূত্রে জানা গেছে, নুসরাত ফ্ল্যাট মালিককে জানিয়েছিল তিনি, তার স্বামী মিজানুর রহমান সানি ও ছোট্ট বোন মুনিয়াকে নিয়ে থাকবেন। এই শর্তেই তাদেরকে ফ্লাট ভাড়া দেওয়া হয়।
গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের ওই ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার বড়বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্ত করছি। তবে, কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে এটা জানতে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর এত টাকা দিয়ে তিনি এখানে বাসা ভাড়া করে কীভাবে থাকতেন, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোথা থেকে টাকা আসত-সবই তদন্ত হচ্ছে। আমরা মুনিয়ার বোনকে থানায় ডেকেছি। দুই-একদিন পর তিনি আসবেন বলেছেন।’
এদিকে মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ গণমাধ্যমে জানান, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম মারা যান ২০১৫ সালে আর মা মারা যান ২০১৯ সালে। এরপর থেকে মুনিয়া সম্পূর্ণভাবে নুসরাত ও তার স্বামীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ছোট বোনের এ পরিণতির জন্য সবুজ নিজেও তার বোন নুসরাত ও তার স্বামীকে দায়ী করেন।
সূত্র: ঢাকা টাইমস