আগেই বলা হয়েছিল, করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া বিদেশ থেকে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। প্রাথমিকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত করা হবে। বিভিন্ন সময় বিমানবন্দরে করোনা পজিটিভ যাত্রীর উপস্থিতি মেলায় এ নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষের ওই বার্তায় বলা হয়েছিল, ‘গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কয়েকটি এয়ারলাইন্স যাত্রীদের পিসিআর নির্ভর কোভিড -১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া যাত্রী বহন করছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে, করোনা পজিটিভ যাত্রীও নিয়ে এসেছে।’ এ কারণে কয়েকটি বিমান সংস্থাকে জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু এমন নির্দেশনা মানছে না অনেকেই। ওই নির্দেশনার পরও করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া যাত্রী বহন করেই চলেছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে দেয়া করোনা পজিটিভের সনদসহ-ই তারা উড়োজাহাজে চেপে বসছে।
গত শুক্রবারও করোনা ভাইরাস সংক্রমিত এক যাত্রী পরিবহন করেছে কাতার এয়ারওয়েজ। এর দায়ে সংস্থাটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া দায়িত্বহীন আচরণের জন্য যাত্রীকেও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওইদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জামিল-এর ভ্রাম্যমাণ আদালতে এ জরিমানা করা হয়।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকালে কাতার এয়ারলাইন্সের কিউআর-৪১৯ ফ্লাইট পৌঁছালে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা যাত্রীদের সনদ পরীক্ষা করেন। এসময় একজন করোনা পজিটিভ যাত্রী পাওয়া যায়। সেখান থেকে দ্রুত তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এর আগে ১২ই ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে করোনা পজিটিভ এক যাত্রীকে বহন করে ঢাকায় নিয়ে আসায় জরিমানা করা হয়েছে এয়ার এশিয়া এয়ারলাইন্সকে। তিনিও পজিটিভ সনদ নিয়েই ফিরেছেন। করোনামুক্ত সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন সম্পূর্ণ নিষেধ থাকলেও এয়ারলাইন্সটি সে নির্দেশনা উপেক্ষা করায় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সম্প্রতি ১০টির বেশি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে পাঁচ শতাধিকের বেশি যাত্রী করোনা সনদ ছাড়াই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দুই যাত্রী করোনা পজিটিভ সার্টিফিকেট থাকার পরও দেশে আসেন। পরে তাদের বিমানবন্দর থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পজিটিভ সনদ নিয়ে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষগুলো কীভাবে যাত্রী বহন করে নিয়ে আসে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট উত্তর তাদের কাছে নেই। নির্দেশনা উপেক্ষা করে করোনা পজিটিভ যাত্রী বহন করায় স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠেছে। বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা তারা যথাযথ আমলে নিচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
এদিকে বৃটেনে করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয়েছে এবং দেশটিতে ভাইরাসটি প্রভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় অর্ধশত দেশ বৃটেনের সঙ্গে বিমান চলাচল স্থগিত রেখেছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশ এখনও তার আগের অবস্থানেই রয়েছে। এই অতিমারির মধ্যেও দেশটির সঙ্গে বিমান চলাচল অব্যাহত রেখেছে। এতে ঝুঁকি বেড়েছে বহুগুনে। বাংলাদেশের এ সিদ্ধান্ত করোনা মহামারির শুরুর দিকে ইতালির ফ্লাইটের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ওই সময় ইতালিফেরত প্রবাসীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনা ছড়ানোর তথ্য মেলে। সম্প্রতি বৃটেনের অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠেছে, বাংলাদেশ কি তাহলে এতদিনেও করোনার ভয়াবহতা বুঝতে সক্ষম হয়নি?