ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার করোনার টিকা দেশে আসছে শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে বেক্সিমকো এখানে মধ্যস্থতা করছে। এতে সরকার অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন। তবে সরকার যেসব শর্ত দিচ্ছে তা আগে জানলে বেক্সিমকো এই মধ্যস্থতায় যেত না বলে জানিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ এই কর্মকর্তা।
রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হাসান পাপন এসব কথা বলেন।
ভারতের সেরাম থেকে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনেছে বাংলাদেশ সরকার। এখানে বেক্সিমকো একটি মধ্যস্থতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বলে জানান পাপন। ভ্যাকসিন আমদানি করতে সারা বিশ্বের নিয়ম হলো, সরকার একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাকসিন নেবে। এক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট বা অফিস থাকতে হবে ভ্যাকসিন সরবরাহকারী দেশে। ৬০টি দেশে বেক্সিমকোর এজেন্ট রয়েছে। সে কারণে ভারত থেকে বেক্সিমকোর মাধ্যমে সরকার নিজে ভ্যাকসিন আমদানি করছে বলে জানান নাজমুল হাসান পাপন।
পাপন জানান, ভ্যাকসিনের দাম ওঠানামা করতে পারে। এক্ষেত্রে ভারত সরকার যে দামে ভ্যাকসিন পাবে, বাংলাদেশও একই দামে পাবে- এমন চুক্তিতেই সেরাম থেকে ভ্যাকসিন কিনেছে বাংলাদেশ। এমন চুক্তি বিশ্বের আর কোনো দেশের সঙ্গে নেই বলে জানান তিনি।
তিন কোটি ডোজের প্রথম চালান আগামীকাল সোমবার দুপুরে আসছে জানিয়ে পাপন বলেন, ‘আগামীকাল ভারত থেকে চুক্তি প্রথম চালানে ৫০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন আসছে। চালানটি গ্রহণ করে তা ল্যাবে পাঠানো হবে। ল্যাব পরীক্ষার পর যখন ক্লিয়ারেন্স পাব, তখন সরকার যে ৬৪টি জেলায় দিতে বলবে সেখানে পাঠাবো। শুধু পৌঁছালে হবে না, এটা প্রমাণ করতে হবে যে, এটার সবকিছু ঠিক আছে।‘
ভারত থেকে আসা ভ্যাকসিন যদি ভাঙা থাকে বা কোনো কারণে ভ্যাকসিন কম থাকে তাহলে সে দায় বেক্সিমকোকে বহন করতে হবে। সরকার এখানে ঝুঁকিমুক্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন কোটি ডোজ মানে তিন কোটি ডোজ বুঝিয়ে দিতে হবে। সব দায় দায়িত্ব বেক্সিমকোর। সরকার এখানে রিস্ক ফ্রি।’
সেরাম থেকে বেক্সিমকোর ভ্যাকসিন নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেক্সিমকোর প্রথমে যেকোনোটা নিতে পারত। আমরা চিন্তা করে দেখলাম, আপনি যদি ১০ কোটি লোককে ভ্যাকসিন দিতে চান তাহলে অন্য কোম্পানি থেকে নেয়া সম্ভব না। তখন একমাত্র অপশন ছিল অক্সফোর্ড। সেরামের কাছে ১০ কোটি ডোজ ছিল। একটু দেরি হলে এটাও থাকত না।’
পাপন বলেন, ‘এখন সব দেশ ভ্যাকসিন চাচ্ছে। তারা জুনের পর পাবে। ব্রাজিল সরকার বিমান পাঠাতে চাচ্ছে, তাও পাচ্ছে না। আমরা প্রথমে সেরামকে অর্ডার করি। তাই আমরা পেয়েছি।‘
ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মডার্না ও ফাইজারের ভ্যাকসিনে কিছু সাইড ইফেক্ট আছে। যা আমাদের কাছে নতুন। এখন পর্যন্ত যেটা শুনেছি, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে কাউকে হাসপাতালে যেতে হয়নি বলে ওরা বলছে। ভ্যাকসিন নেয়ার পর যদি কারো কোনো সাইড ইফেক্ট দেখা দেয়, সরকার দেখবে।‘
সরকার যে শর্ত দিয়েছে, তা আগে জানলে বেক্সিমকো ভ্যাকসিন আমদানির দায়িত্ব নিত না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের কিছু লাভ তো থাকবেই। সরকার যে শর্তগুলো দিয়েছে, এটা আগে জানলে আমরা এই দায়িত্ব নিতাম না।’
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনি নিজে এই ভ্যাকসিন নেবেন কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে পাপন বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল, আমি প্রথমেই নেব। কিন্তু আমি কতগুলো ওষুধ খাই। যার কারণে আমাকে কিছু দিন পর নিতে হবে। আমি চার পাঁচ দিন পর নেব এবং এটাই নেব।’