আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন রাজনীতিবিদ, সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মীদের ফুলেল শ্রদ্ধা আর অশ্রুতে সিক্ত হয়ে বিদায় নিলেন। বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদ চিরঘুমে শায়িত হলেন জন্মস্থান গলাচিপার গজালিয়া ইউনিয়নের ইছাদী গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে। গ্রামের বাড়ি চতুর্থ জানাজা শেষে তার বাবা মো. ইদ্রিস ঢালী ও মা মালেকা বেগমের পাশে শায়িত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার মিরপুরে প্রথম জানাজা শেষে বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে খম জাহাঙ্গীরের মরদেহ আনা হয় দশমিনা উপজেলার বীজবর্ধন খামারের মাঠে। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদাসহ দশমিনা উপজেলা প্রশাসন, দলীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। এর পর খম জাহাঙ্গীরের মরদেহ নিয়ে আসা হয় জন্মভূমি গলাচিপায়। গলাচিপা স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। পরে উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্থানীয় হাইস্কুল ফুটবাল খেলার মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম সরোয়ার, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়, পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান মোহন মিয়া, গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সন্তোষ কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা টিটোসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পর গলাচিপা থেকে চিরঘুমে শায়িত করার জন্য খম জাহাঙ্গীরকে নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে। এসময় হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বুক ফাটা আর্তনাতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
এদিকে আ খ ম জাহাঙ্গীরের মৃত্যুতে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ এক দিনের শোক পালন করছেন। এ উপলক্ষে সকালে দলীয় কার্যালয় জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। একই সাথে গলাচিপা পৌর এলাকার সকল দোকান পাট ও বাসা-বাড়িতে কালো পতাকা উত্তোলণ করা হয়।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, আ খ ম জাহাঙ্গীরের শূণ্যতা পূরণ হওয়ার মতো নয়। তিনি আমার এবং এ এলাকার অভিভাবক ছিলেন। এলাকার সীমানাা পেরিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার পরেও আমি চেষ্টা করবো খম জাহাঙ্গীর গলাচিপা-দশমিনায় উন্নয়নের যে বীজ বপণ করেছিলেন সেই ধ্যান ধারণার তার আদর্শ মতো আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিকভাবে সহায়তা করার জন্য পরিবারের সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন ১৯৫৪ সালের ১৮ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার গজালিয়ার চরচন্দ্রাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮১-৮৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের সহ -দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন ১৯৯১,১৯৯৬, ২০০১ ও ২০১৪ সালে পটুয়াখালী-৩ থেকে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। সবশেষ গত বছর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।