বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট থানার চর আস্তাইল গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মৃত খালিদ শেখের পরিবার মালেশিয়াস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসের সহযোগিতায় ১৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেল । গত ১০ নভেম্বর মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের তিলকগং একটি কারখানায় কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত হন বাগেরহাট জেলার প্রবাসী খালিদ শেখ। সেই সময় সহকর্মীরা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে প্রবাসী খালিদ শেখের মৃত্যুর পর তড়িঘড়ি করে লাশ দেশে পাঠানোর চেষ্টা করে কোম্পানী। এছাড়াও দেশে থাকা খালিদের পরিবারের কাছে কোম্পানী অভিযোগ করেন লাশ দেশে প্রেরণ করতে দুতাবাস ছাড়পত্র দিচ্ছে না। কিন্তু কোম্পানী থেকে ক্ষতিপুরণ আদায় ব্যতিত লাশ দেশে প্রেরণের অনুমতি না দিয়ে মাত্র চার দিনের মধ্যে ১৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ক্ষতিপুরণ আদায় করে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন। নিহত খালিদ শেখের পরিবার ক্ষতিপুরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পরই ছাড়পত্র দেয় বাংলাদেশ দুতাবাস।
দুতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) সুমন চন্দ্র দাশ বলেন, বাংলাদেশের কোন নাগরিক মালয়েশিয়ায় মৃত্যু বরণ করলে এবং তা হাই কমিশনের নজরে আসার সাথে সাথেই হাই কমিশন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সাথে কাজ করে থাকেন। এক্ষেত্রে হাই কমিশনের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজের আত্মীয় স্বজন হারালে যে ব্যথা অনুভূত হওয়ার কথা সেই সমব্যথায় ব্যথিত হয়ে লাশ প্রেরণের কাজটি করে থাকেন। ডকুমেন্টেড অথবা আনডকুমেন্টেড যে কোন কর্মীর মৃত্যু হলে লাশ দেশে প্রেরণের জন্য ডেথ সার্টিফিকেট, মেডিক্যাল রিপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও কাসকেট কোম্পানি নিয়োগের প্রয়োজন হয়। ডকুমেন্টেড কর্মীর দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হলে ইন্সুরেন্স বাবদ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি সময় সাপেক্ষ বিষয়।
কিন্তু হাই কমিশন যেকোন মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোম্পানির নিকট থেকে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে থাকে। কোন কোম্পানিই স্বাভাবিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে চায় না বা দিতে চাইলেও সেক্ষেত্রে গড়িমসি করে। যেকোন পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায়ে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়। লাশ প্রেরণে এদেশে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টার কারণে কোন কোন লাশ প্রেরণে কিছু সময় বেশি লাগে। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির স্বজনরা অধৈর্য হয়ে পড়েন এবং কখনো কখনো দুতাবাসকে ভুল বুঝেন।
এ সময়টাতে নিহতের পরিবারকে ধৈর্য ধারণের আহবান জানিয়ে সুমন চন্দ্র দাশ আরও বলেন, স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে হাই কমিশন আবেদন প্রাপ্তির যথাযথতা সাপেক্ষে তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যে হাই কমিশনের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় পত্র ইস্যু করা হয়। প্রবাসীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিতে হাই কমিশন সামর্থ্য অনুযায়ী বদ্ধপরিকর।
বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট থানার চর আস্তাইল গ্রামের খলিদ শেখ ভাগ্যউন্নয়নের আশায় এক দশক আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান । এক স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখেই কাটছিলো তাদের সংসার। হঠাৎ মালয়েশিয়া কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত হলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা খালিদের পরিবার বলেন, আমাদের বিপদে দুতাবাসের একান্ত সহযোগিতায় কোম্পানী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়। আমরা মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞা জানাচ্ছি। এছাড়া আমাদের গ্রামবাসীও দুতাবাসের প্রতি কৃজ্ঞতা জানিয়েছেন।