যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের প্রযুক্তি খাত, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সেমিকন্ডাক্টর এবং মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্সে বিনিয়োগের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এই নির্বাহী আদেশের মূল লক্ষ্য হল চীনের সামরিক সক্ষমতাকে উন্নত করতে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজির প্রবাহ বন্ধ করা।
এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য হল যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকে চীনের সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়নের কাজে লাগানো থেকে বিরত রাখা। এই আদেশে উচ্চ প্রান্তের প্রযুক্তি যেমন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সেন্সর, নেটওয়ার্ক এবং উন্নত সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও, কিছু নিম্ন স্তরের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলিকে সরকারকে অবহিত করতে হবে।
নিষেধাজ্ঞাগুলি কেবল নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, বিদ্যমান চুক্তির ক্ষেত্রে নয়। এছাড়াও, তথাকথিত “প্যাসিভ ইনভেস্টমেন্ট” যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পেনশন তহবিলের বিনিয়োগ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। তবে, বেসরকারি ইক্যুইটি, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মাবলী প্রয়োগ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসও এই নিষেধাজ্ঞাগুলি আরও বিস্তৃত করতে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কিছু প্রস্তাবিত আইন চীনের প্রতিরক্ষা ও নজরদারি প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ প্রায় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে চায়। এই আইনগুলি বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলিকে আরও স্থায়ী ও কার্যকর করতে সাহায্য করবে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই নির্বাহী আদেশ সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে। চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে “বিচ্ছিন্নকরণ ও চেইন ভাঙ্গা” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এই নতুন নিয়মাবলী চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতাকে আরও তীব্র করবে। যদিও এই নিষেধাজ্ঞাগুলি চীনের অর্থনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না, তবে এটি চীনের সামরিক ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন যে এই নিষেধাজ্ঞাগুলি চীনের অর্থনীতির সাথে বিচ্ছিন্নকরণের উদ্দেশ্যে নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলি চীনের উচ্চ প্রান্তের প্রযুক্তি খাতকে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তিগত ও সামরিক প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নয়, বরং চীনের সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়নের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করবে।