জাতিসংঘে মিয়ানমারের নেতৃত্ব নিয়ে সামরিক জান্তা পরাজিত হয়েছে। গত এক মাসে সহিংস বিক্ষোভ দমনের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনা সরকারের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের হয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব কে করবে সেটা নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে বক্তব্য দেওয়ায় জান্তা সরকার শনিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুনকে বরখাস্ত করে। তবে জাতিসংঘ বলছে কিয়াও মো তুন তার পদে বহাল রয়েছেন।
এর আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন এক বক্ততৃায় অভ্যুত্থানকারীদের থামাতে জাতিসংঘকে ‘ব্যবস্থা নিতে’ অনুরোধ জানান। এক আবেগময় বক্তৃতায় কিয়াও বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা উচিত নয়।
এদিকে, মিয়ানমারের ওয়াশিংটন দূতাবাস জান্তা সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করছে কিনা সেটা স্পষ্ট নয়। এর আগে এই দূতাবাস থেকে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়। ওই বিবৃতিতে সেনা কর্তৃপক্ষকে তারা সর্বোচ্চ বিরত থাকার আহ্বান জানান। ওয়াশিংটনের মিয়ানমারের দূতাবাসের অন্তত একজন কূটননৈতিক পদত্যাগ করেছে এবং তিনজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন; তারা নাগরিক আন্দোলনে অংশ নিবেন।
মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা বিদেশে কূটনৈতিকদের তাদের প্রতি সমর্থনকে উৎসাহ হিসেবে নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ইউ জে ইয়ান নামে একজন বিক্ষোভকারী বলেন, যারা রাস্তায় বিক্ষোভ করছে বিদেশে কূটনৈতিকদের আন্দোলনে সমর্থন তাদেরকে উৎসাহ দিচ্ছে।
অন্যদিকে, মিয়ানমারে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তা থমাস অ্যান্ডু শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদকে মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই সভায় বিশ্বব্যাপী মিয়ানামরের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এর আগে এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের এই তদন্ত কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সামরিক সরকারের অধীনে থাকা মিয়ানমারের তেল, গ্যাস এন্টারপাইজের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।
এদিকে, বিদেশি কূটনৈতিক নিয়ে বিশ্বস্তার লড়াইয়ের মধ্যে শুক্রবার মিয়ানমারে সাধারণ জনতা সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালাইয়ে বিরাট সংখ্যক জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছে। মিছিলে তারা ‘পাথরের যুগ শেষ হয়েছে, তোমাদের হুমকিতে আমরা আর ভয় পাই না’ স্লোগান দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের থামায়নি।
তবে মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে পুলিশ সাদা পোশাকে শতাধিক ডাক্তারদের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, স্টান গ্রেনেড ছোড়ে। এছাড়া ইয়াঙ্গুনের পাথেইন শহরেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার পুলিশ র্যালি বন্ধ করতে কয়েকটি শহরে টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। কিন্তু তার আগের দিন বুধবার বিক্ষোভকারীদের জন্য একটি রক্তক্ষয়ী দিন ছিল। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে এদিন পুলিশের গুলিতে ৩৮ বিক্ষোভকারী নিহত হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘জঘন্য হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনি জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে ২৯ জন সংবাদিকসহ মোট ১৭শ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রয়টার্সের পক্ষ থেকে মন্তব্য নেয়ার জন্য সেনা কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেননি।