স্মার্ট হোম অ্যান্ড স্মার্ট সিটি প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত ডিভাইস এর ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে প্রচলিত ডাটা কমিউনিকেশন এর নেটওয়ার্ক এবং ব্যান্ডউইথের উপর চাপ বেড়ে চলেছে। আর এই সমস্যার সমাধানে এবং ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক এর সাথে তাল মিলাতে ভিএলসি (VLC- Visible Light Communication) বা লাইফাই (Lifi) প্রযুক্তি হতে পারে আগামী দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ট্রান্সফারের মাধ্যম। ভিএলসি হলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের দৃশ্যমান আলোর অংশের মাধ্যমে উচ্চগতির ডেটা ট্রান্সফারের জন্য একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। বর্তমান প্রচলিত বহুল ব্যবহৃত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কমিউনিকেশন থেকে ১০০ গুণ বেশি ব্যান্ডউইথ প্রদানে সক্ষম। এক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকরী এলইডি লাইট এবং এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে ১০ গেগাবিট পার সেকেন্ড ডেটা ট্রানস্ফার করার বিভিন্ন টেকনিক এবং এটাকে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক এর সাথে একীভূত করে হাইব্রিড নেটওয়ার্ক চালু করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা হচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায় প্রতি সপ্তাহে ১.৩ মিলিয়ন মানুষ সারা বিশ্বের শহরাঞ্চলে চলে যাচ্ছে এর ফলে ২০৪০ সাল নাগাদ স্মার্ট শহরের আইডিয়া বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যকীয় পড়বে। এটা ইম্প্লেমেন্টেশন এর জন্য স্মার্ট সলিউশন এবং দক্ষ জনবল তৈরিতে এখুনি পদক্ষেপ নেয়া অত্যাবশ্যকীয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের একজন পিএইচডি গবেষক , মোনাশ ইউনিভার্সিটি তে হাইস্পিড ভিএলসি এবং এই প্রযুক্তির স্পিড বৃদ্ধির জন্য কিছু নতুন আইডিয়া উদ্ভাবন করেছেন এবং প্রচলিত আইডিয়ার সাথে সংযুক্ত করে ইন্টিগ্রেটেড রিয়েল সিস্টেম বা হাই স্পিড নেটওয়ার্ক এর প্রস্তাবনা করে বিশ্বের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই আবিষ্কার বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্সেও আলোচিত হয়েছে। তিনি ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া থেকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স শেষ করে , ২০২০ সালে মনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড কম্পিউটার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং এ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এর আগে তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অর্গানাইজেশনে ১০ বছরের বেশি বিভিন্ন নেটওয়ার্ক সল্যুশন যেমন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নেটওয়ার্ক, অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক এবং ফাইবার এপ্লিকেশন এবং স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে (সিএসই ডিপার্টমেন্টে) কর্মরত আছেন। স্মার্ট সিটি বা স্মার্টহোম অবকাঠামোর বিকাশ ও বাস্তবায়নের জন্য রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তে এলইডি লাইটের মাধ্যমে আলোর তরঙ্গ ব্যবহার করে অতি উচ্চ গতির ইন্টারনেট ছিল তার গবেষণার মূল বিষয়।
একটি এলইডি লাইটের দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গ কে বিভাজিত করে CWDM কনসেপ্ট বাস্তবায়ন করে CDWM-VLC নতুন ধারণা প্রস্তাবনা করেন যার মাধ্যমে একটা LED লাইটের আলোর তরঙ্গ কে ২০ টি পৃথক চ্যানেলে রূপান্তর করে ২০ গুণ বেশি ডেটা ট্রানস্ফার করা সম্ভব। এই Multi-Channel LED বিশিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন ,আগামীদিনে উচ্চ গতির ইনডোর কমিউনিকেশনের চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই উচ্চগতির সিস্টেমের আপলিংকের স্পিড বৃদ্ধিতে এই নেটওয়ার্কের ডাউনলিংক ব্যাকবোন হিসেবে এবং আপলিংকে ফাইভ-জি মিলিমিটার ওয়েব সিগনাল ব্যবহার করে একটি পরীক্ষামূলক হাইব্রিড 5G-VLC নেটওয়ার্ক প্রপোজ করেন। এছাড়াও হাই ব্যান্ডউথ সম্পন্ন মাল্টিপল এলইডি ডিজাইন করেছেন যেটার মাধ্যমে একটি এলইডি, লাইটিং এর পাশাপাশি উচ্চগতির ইন্টারনেট বা লাইফাই নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন সম্ভব ।
এলইডি লাইট দিয়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট গবেষণায় প্রচলিত টেকনিক যেমন WDM তরঙ্গ বিভাজন মাল্টিপ্লেক্সিং হাই অর্ডার মডুলেশন স্কিম যেমন ওএফডিএম (OFDM) , মাল্টিপল ইনপুট মাল্টিপল আউটপুট (MIMO) মিমো, প্রি অ্যান্ড পোস্ট ইকুয়ালাইজেশন এর পাশাপাশি এই নতুন গবেষণা আগামীদিনের লাইফাই প্রযুক্তির কে আরো একধাপ এগিয়ে নিবে। আগামীতে এই প্রযুক্তি শহরের ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্মার্ট হোম নেটওয়ার্ক স্মার্ট হসপিটাল যেমন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল মুক্ত হাসপাতাল, নিরাপদ ট্রাকিং সিস্টেম নদী বা সমুদ্রের তলে যোগাযোগের মাধ্যম এবং ইনডোর বা ইন ক্যাম্পাস যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের প্রস্তাবিত পরিবেশবান্ধব গ্রীন সিটি নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নের দ্বার উন্মোচিত করবে।
গবেষক
ডঃ মুহাম্মদ তৌফিকুর রহমান
এসিস্টেন্ট প্রফেসর, সিএসই ডিপার্টমেন্ট,
ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক, ঢাকা।