নয় জেলায় সড়ক ও রেলপথে দুর্ঘটনায় ১৫ জনের প্রাণ ঝরেছে। বুধবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। এর মধ্যে দুটি ট্রেন দুর্ঘটনায় চারজন এবং টমটম, ইজিবাইক, বাস ও ট্রলি দুর্ঘটনায় ১১ প্রাণহানি হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৪ জন পুরুষ ও একজন শিশু। আহত হয়েছেন আরও ২৩ জন। ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, বান্দরবান, গাজীপুর, জামালপুর জেলার সড়কে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। আর ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুর ও পাবনায়।
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার লংগাইর গ্রামে টমটমের নিচে চাপা পড়ে আনিশা (৮) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। সে ওই এলাকার প্রবাসী মোহাম্মদ আলামিনের মেয়ে এবং স্থানীয় মাইজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বুধবার সকালে রাস্তা পার হতে গিয়ে টমটমের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয় আনিশা (৮)। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুজন নিহত হয়েছেন। বুধবার সকাল ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ঘুটাবাছা নামক স্থানে ঢাকা থেকে যমুনা লাইন পরিবহনটি কুয়াকাটায় যাওয়ার পথে কলাপাড়াগামী ইজিবাইকের সঙ্গে সংর্ঘষ হয়। এতে নিহত হয়েছেন ওই ইউনিয়নের গৈয়াতলা গ্রামের মো. ইউনুচ প্যাদার ছেলে মো. বায়জিদ (১৪) ও একই ইউনিয়নের গামৈরতলা গ্রামের তানজের আলীর ছেলে সেলিম তালুকদার (৪৭)। ইজিবাইকে করে সেলিম তালুকদার ও বায়েজিদসহ অন্যরা মাছ বিক্রি করার জন্য কলাপাড়া শহরের বাজারে যাচ্ছিলেন।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ইজিবাইক চালক মো. মামুন প্যাদা (২৩), যাত্রী নিজাম উদ্দিন (৩৫) ও আরাফাতকে (২২) উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ট্রাকচাপায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিন ইজিবাইক যাত্রী। হতাহতরা মাছ ব্যবসায়ী।
বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের হাসিল নামক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের একজন মানিক হালদার (৬০)। মানিক ছোনগাছা ইউনিয়নের নওদা ফুলকোচা গ্রামের গোবিন্দ নাথ হালদারের ছেলে। হতাহত বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম দুজন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছে। ওসি জানান, সকালে মাছ ব্যবসায়ীরা একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে সিরাজগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলেন। তারা হাসিল নামক এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাদের চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
শেরপুর: শেরপুরের শ্রীবরদীতে বনভোজন শেষে বাড়ি ফেরার পথে যাত্রী বোঝাই একটি ট্রলি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ১৩ জন। মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার কলাকান্দা-দিয়ারচর এলাকার ব্রিজের নিচে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- শ্রীবরদীর খড়িয়া কাজীরচর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের আবু তালেবের ছেলে ইসমাইল (১৮) ও সেলিমের ছেলে সাইদুল মিয়া (১৮)। আহতদের মধ্যে সাগর (২২), মামুন (১৮), লোকমান (১৭), আরিফ (১৬), রাশেদ আলী (১৭), হাফিজুর (১৮), সাকিল (২৫) ও জুয়েলকে (১৪) আহতাবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা শ্রীবরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছে। এদিকে গুরুতর আহত আরও একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনায় হতাহত সবাই শিক্ষার্থী। তারা স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করত।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বুধবার সকালে শ্রীবরদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, ট্রলি চালককে আইনের আওতায় আনতে অভিযান শুরু হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া গ্রামের ৩০ জন ছাত্র-যুবক লেগুনা গাড়ি করে গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে বনভোজন করতে যায়। সন্ধ্যায় সেখান থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী পিকআপ ভ্যানে করে সাউন্ডবক্স ফেরত দিতে শ্রীবরদী বাজারে যায়। এ সময় সাউন্ডবক্স নামিয়ে ট্রলি দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি ফেরার সময় দ্রুতগামী ট্রলিটি স্থানীয় কলাকান্দা-দিয়ারচর সড়কের মামদামারী এলাকায় উল্টে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এ সময় ট্রলি থেকে লাফ দিয়ে দুই যুবক প্রাণে বাঁচলেও বাকি ১৩ জনের মধ্যে ইসমাইল ও সাইদুল মারা যায়। ঘটনার পর ট্রলির চালক জুয়েল মিয়া কৌশলে পালিয়ে যান।
বান্দরবান: বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে বেইলি ব্রিজ ভেঙে ট্রাক খাদে পড়ে ট্রাকচালক নিহত হয়েছে। এতে বান্দরবান সদরের সঙ্গে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে। বুধবার দুপুরে বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কের মুরুং বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, চালভর্তি একটি ট্রাক রুমায় যাচ্ছিলো। পারাপারের সময় বেইলি ব্রিজ ভেঙে ঝিড়িতে পড়ে যায় গাড়িটি। এসময় ট্রাক চালক আব্দুল গফুর ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
গাজীপুর: গাজীপুরে টেম্পোর সঙ্গে মিনিবাসের সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহানগরের বাসন থানার ইটাহাটা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউজ্জামান দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন– টেম্পোযাত্রী স্থানীয় কড্ডা নান্দুন এলাকার বাসিন্দা গাউছ মিয়ার স্ত্রী মারুফা বেগম (৫৪) এবং একই এলাকার বাসিন্দা নুর আলমের ছেলে লিমন (১২)। লিমন নাওজোর মেধাবিকাশ কিন্ডার গার্টেনের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
এসআই মতিউজ্জামান জানান, সকালে যাত্রীবাহী টেম্পোটি মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা যাচ্ছিল। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ইটাহাটা এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে তাকওয়া পরিবহন নামে মিনিবাস টেম্পোকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই লিমন নিহত হয় এবং মারুফা গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা মারুফাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
জামালপুর: জামালপুরে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে সুমন কুমার কুণ্ডু নামে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুই জন। বুধবার সকালে জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কের নান্দিনা খড়খড়িয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জামালপুর থানার ওসি মো. রেজাউল করিম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঢাকাগামী রাজীব পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে জামালপুরগামী একটি সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় সুমন কুমার কুণ্ডু নামে অটোরিকশার এক যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন অটোরিকশার আরও দুই যাত্রী।
তিনি আরও জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহত সুমন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে টেরিটরি সেলস অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে ।
পাবনা: পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালের দিকে উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বাঘহাছলা এলাকার ঈশ্বরদী-পাবনা রেললাইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহীগামী পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঈশ্বরদীর মুলাডুলি রেললাইন অতিক্রমের সময় অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এখান দিয়ে ট্রেন চলাচল করলেও কোনও ক্রসিং দেওয়া হয়নি। ফলে অসাবধানতাবশত চলাচল করতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। এর আগেও একাধিকবার এখানেই ট্রেনে কাটা পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানা পুলিশের ওসি গোপাল কুমার কর্মকার জানান, স্থানীয়দের মাধ্য্মে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করেছে। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত মৃতের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
দিনাজপুর: ঘন কুয়াশায় রেলক্রসিংয়ে থাকা দড়ির ব্যারিকেড বুঝতে না পেরে রেললাইন অতিক্রম করার চেষ্টা করেন যাত্রীবাহী প্রাইভেট কারের চালক। মুহূর্তের মধ্যে চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় ১০ গজ দূরে ছিটকে পড়ে দুমড়েমুচড়ে যায় প্রাইভেট কারটি। গাড়িতে থাকা চালকসহ তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত দুজন যাত্রীকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান স্থানীয়রা।
বুধবার ভোর সাড়ে ৬টায় দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ঘোড়াঘাট রেলগেট নামক জায়গায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নিহতরা হলেন চালক রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ইসলাম উদ্দিনের ছেলে মাসুম হোসেন (৪০) ও দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার শাহ্পাড়ার (খাগড়াবন্দ) মো. আব্দুল হালিম শাহের ছেলে হাফিজুর রহমান শাহ (৩৮)। নিহত আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।