এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নারীসঙ্গের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় হলমার্ক অর্থ কেলেঙ্কারি মামলার অন্যতম আসামি তুষার আহমেদকে। এর মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর জেলার নুর মোহাম্মদ ১ লাখ টাকা, ডেপুটি জেলার মো. গোলাম সাকলাইন ২৫ হাজার ও অন্যান্য সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর, গেট সহকারী প্রধান কারারক্ষী ৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
গত ৬ জানুয়ারি দুপুরে কাশিমপুর কারাগারের ভেতরে হলমার্কের জিএম তুষার আহমেদের সঙ্গে একজন নারীর একান্ত সাক্ষাতের চিত্র কারাগারের সিসিটিভিতে ধরা পড়ে। এ সময় সেখানে ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ সাকলাইনসহ বাকি দুজনকে দেখা যায়।
এ ঘটনায় কারা অধিদপ্তর দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় শুরুতে তিন জনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরা হলেন ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ সাকলাইন, সার্জেন্ট আব্দুল বারী ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমান। পরে রোববার আরও দুজনকে প্রত্যাহার করা হয়। তারা হলেন জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা ও সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়।
কারাগারে বিধিবহির্ভূত নারীসঙ্গের বিষয়টি আলোচনায় আসলে গত ১৪ জানুয়ারি কারা মহাপরিদর্শকের কাছে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করেন সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়। তবে এ ঘটনায় নিজের দায় নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, সিসিটিভি ফুটেজে সম্পৃক্ততার বিষয়টি দেখা যাওয়ায় রত্না রায় ও জেলার নুর মোহাম্মদকে প্রত্যাহার করে সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে রত্না রায় ওই দিনের ঘটনার জন্য জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধাকে প্রধানত দায়ী করেছেন। তার সঙ্গে পুরো ঘটনায় ডেপুটি জেলার মো. সাকলায়েন জড়িত ছিলেন। আর ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে তার অগোচরে ও গোপনে হয়েছে।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, জেলারই ওই নারীসহ সংশ্লিষ্টদের কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেন এবং ডেপুটি জেলার তাদের রিসিভ করেন। জেলারের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া একজন বিচারাধীন আসামির সঙ্গে কারও সাক্ষাতের জন্য কারাগারের অফিসে আসা সম্ভব নয়। জেলারের সিনিয়র জেল সুপারকে অবহিত করার কথা, কিন্তু জেলার তা করেননি।
সামগ্রিক বিষয়টি গোপন রাখতে ওয়াকিটকি বাদ দিয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করে সমন্বয় করা হয়েছে। তাকে না জানাতেই এসব করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তুষার আহমেদ একজন সাধারণ বন্দি। তিনি শ্রেণিপ্রাপ্ত নন, এ কারণে তার অফিসে এসে সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি জেলারসহ সংশ্লিষ্টরা অবগত আছেন। ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইন ও গেট ওয়ার্ডার সহকারী প্রধান খলিলুর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, তারা জেলারকে অবগত করে বন্দি তুষারকে অফিসে নিয়েছেন।
কারা সূত্র জানায়, ওই মহিলা কারাগারের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন ৬ জানুয়ারি ১টা ৫৬ মিনিটে। কারা সেল থেকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা তুষার কারা অফিস কক্ষে আসেন ২টা ৪ মিনিটে। এরপর জেল সুপার রত্না রায় অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে যান ২টা ১৫ মিনিটে। কারা অফিসের একটি কক্ষে টানা ৪৫ মিনিট অবস্থান করেন তুষার ও ওই নারী।
ঘটনাটি তদন্তে জেলা প্রশাসন ও কারা অধিদপ্তর থেকে পৃথক দুটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তদন্তের স্বার্থে দুই দফায় কারাগারের ৫ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ওই মহিলা হাজতির স্ত্রী বলে জানা গেছে। বিষয়টি তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ওই নারীর যেভাবে সাক্ষাৎ করার বিষয়টি সামনে এসেছে, তা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী যারা দায়ী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরির্দশক কর্নেল মো. আবরার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে কাশিমপুর কারাগারের পাঁচ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়ের প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, সবগুলো বিষয় আমলে নিয়ে তদন্ত চলছে।