কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কাজে অস্বাভাবিক বিলম্বের জন্য বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি ২০১২ সালে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবনায় আনায় প্রধানমন্ত্রী এ বিরক্তি ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
বৈঠকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সাথে কেন প্রকল্পটি এখনও শেষ হয়নি তা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে আজকের একনেক বৈঠকে ৯ হাজার ৫৬৯ কোটি ২৩ লাখ টাকার মোট ছয় প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সাপ্তাহিক সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং একনেকের অন্য সদস্যরা এনইসি ভবন থেকে যুক্ত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৩৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এটা (প্রকল্পের কাজের বিলম্ব) নিয়ে তীব্র অসন্তুষ্টি ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, এত বছর পরও প্রকল্পটি শেষ না হওয়ায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী খুব শিগগিরই আইএমইডি (বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোকে এটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে এর প্রতিবেদন দেন এবং আমি এটি বিবেচনা করবো।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ প্রকল্পটি ২০১২ সালে শুরু হয়েছিল এবং মূল প্রকল্পের সময়সীমা অনুযায়ী ২০১৪ সালের মধ্যে এটি শেষ করার কথা। কিন্তু কয়েক দফা বাড়ানোর পর ২০১৯ সালে এটি শেষ করার কথা ছিল। এখন প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবনা এসেছিল, তবে একনেকের বৈঠক এটি ফেরত পাঠিয়েছে। এত বছর কেটে গেলেও প্রকল্পের অগ্রগতি মোটেও সন্তোষজনক নয়।
এমএ মান্নান বলেন, শিগগিরই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিমকে কুষ্টিয়ায় প্রকল্পের বিলম্বের তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন সরকার প্রধানের কাছে দেয়ার পর গণমাধ্যমকেও জানানো হবে।
দুই দিনের মধ্যে তদন্ত টিম গঠন করা হবে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান।
সূত্র জানায়, মূল প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়। ২০১২ সালের ৬ মার্চ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ব্যয় বাড়িয়ে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ হয় ৬১১ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন করা হয়। এই প্রস্তাব ২০১৮ সালের ২১ জুন একনেকে অনুমোদন লাভ করে। পাশাপাশি ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটির আন্তঃখাত সমন্বয় করা হয়।
পরবর্তীতে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৪২ কোটি টাকা এবং মেয়াদ ২০১২ সালের জানুয়ারি হতে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হলে এর ওপর ২০২০ সালের ১২ মার্চ প্রথম পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে প্রথম পিইসি সভার সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে পালন না করায় গত বছরের ২৬ আগস্ট প্রকল্পটির ওপর দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সব শেষে এখন মোট ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি হতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত নির্মাণ কাজের পরিধি ও ব্যয় বৃদ্ধি, জমির পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, যানবাহন, এমএসআর সামগ্রী এবং অফিস সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন কোড সংযোজন ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ২০১৮ সালে পিডব্লিউডির রেট শিডিউল পরিবর্তন হওয়ায় প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া প্রকল্পে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করা, নতুন ভৌত কাজ সংযোজন (আনসার ও ড্রাইভার ব্যারাক কাম গ্যারেজ নির্মাণ, সাব স্টেশন ভবন এবং জাতির পিতা ম্যুরাল স্থাপন), জমির পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস, নতুন স্থাপনার জন্য অতিরিক্ত ৮ একর জমির ব্যয় হ্রাসসহ প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান সংশোধন, যন্ত্রপাতির ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় নতুন যন্ত্রপাতির অন্তর্ভুক্তিকরণ করায় ব্যয় বাড়ছে। এছাড়াও আসবাবপত্রের ব্যয় বৃদ্ধি এবং নতুন স্থাপনার আসবাবপত্র অন্তর্ভুক্তিকরণ (যেমন, ইন্টার্র্নি হোস্টেলের আসবাবপত্র), এমএসআর সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, অর্থ বিভাগের অর্থনৈতিক কোড পরিবর্তনের কারণে নতুন কোড সংযোজন এবং প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে বাস্তবায়ন মেয়াদ বৃদ্ধি করায় ব্যয় বাড়ছে।