স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দুই বিয়ে এবং যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসক জোনায়েত বাতেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার নিউমার্কেট থানার কাঁটাবন পাখির মার্কেটের বিপরীত পাশে একটি বাসা থেকে ওই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তমেজ উদ্দিন বলেন, জোনায়েত বাতেনের প্রথম স্ত্রী আদালতে দুটি মামলা করেছিলেন। এই দুটি মামলাতেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। সেই পরোয়ানামূলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক। শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার চিকিৎসকের প্রথম স্ত্রী গত বছরের মাঝামাঝিতে ঢাকার দায়রা জজ আদালতে দুটি মামলা করেন। তাতে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন ও প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বিয়ের অভিযোগ আনা হয়। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
মামলার বাদী সাংবাদিকদের জানান, জোনায়েত বাতেন ২০১৭ সালে তাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় এবং ২০১৯ সালে তৃতীয় বিয়ে করেন। এছাড়াও বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। মামলা করার আগে স্বামীর নির্যাতন ও অন্য নারীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ জানিয়ে কোনো সুফল পাননি। ২০০০ সালে তাদের বিয়ে হয়েছিল এবং এখনও তাদের বিচ্ছেদ হয়নি। তাদের স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তান রয়েছে।
বিএসএমএমইউর পরিচালক জুলফিকার আহমেদ আমিন অবশ্য তার হাসপাতালের চিকিৎসক গ্রেপ্তারের বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানতেন না। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের খবর আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।’
বিএসএমএমইউর পরিচালক জানান, চিকিৎসক জোনায়েত অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছেন বলে তার স্ত্রী বেশ কিছুদিন আগে তাদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে অভিযোগ স্বীকার করতে চাননি জোনায়েত। এরপর তারা আর বিষয়টি নিয়ে কথা বাড়াননি।
তিনি বলেন, ‘তার স্ত্রী সেই মেয়ের সঙ্গে তার (জুনায়েত) সংশ্লিষ্ট কিছু ছবিও আমাদের কাছে পাঠিয়েছিল। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। এরপর কর্তৃপক্ষ তাকে ডেকেছিল। তবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।’
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির যদি আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাকে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের মধ্যে শেষ স্ত্রীর অনুমতি লাগবে। ওই ব্যক্তিকে এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে। অনুমতির জন্য ফি দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে।
বেশ কয়েকটি শর্তে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দেয়া যেতে পারে। ১. বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব, ২. শারীরিক মারাত্মক দুর্বলতা, ৩. দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা, ৪. দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য আদালত থেকে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা ডিক্রি বর্জন, ৫. মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি। অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে, কারাদণ্ডের মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে।