আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য’ হওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সিইসি নিজেই আশ্বস্ত হওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। তার তিন দিন আগে রোববার চট্টগ্রামে গিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সিইসি নুরুল হুদা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিজিবি, আনসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার ১৬ জনের বক্তব্য আমরা শুনেছি। নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে তারা সবাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। প্রত্যেকে আশাবাদী যে, ২৭ জানুয়ারির চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে। আমরা আশ্বস্থ হয়েছি যে বিভিন্ন পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ মোতোয়েনটা সঠিকভাবে হয়েছে। আশা করি নির্বাচন ভালো হবে।
নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির আয়োজনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে বিএনপি। দলটি বলছে, ইসি সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ হয়ে কাজ করছে। চলমান পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা ঘটনা আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ে নতুন সমালোচনায় পড়েছে ইসি। তার মধ্যেই অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রচারে সংঘাতে প্রাণক্ষয়ের পর ভোটে সেনা মোতায়েনের দাবি তুলেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী।
তা নাকচ করে নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। পাশাপাশি সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজনীয়তাও কমিশন অনুভব করছে না। যেখানে ইভিএমে ভোট হবে সেখানে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা থাকবে। ভেতরে একজনের ভোট আরেকজন দেওয়া সেটা সম্ভব না।’
সিইসি জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে সাধারণ ছুটি থাকছে না। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বৃহস্পতিবার বা রোববার হলে সেখানে আমাদের আশা থাকে ভোটাররা ভোট দেবে। কিন্তু দেখা যায় ছুটি পেয়ে তারা সবাই বাড়ি চলে যায়, ভোট দেয় না। সেকারণে আমরা মাঝখানে রাখি। কেবিনেট থেকে একটা নির্দেশনা জারি আছে, যারা ব্যক্তিগত বা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত থাকবেন তাদের যেন ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এ কারণে সাধারণ ছুটি রাখি না।’
নির্বাচনের দিন ট্রাক এবং মোটর সাইকেল চলাচল নিষেধ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় বহিরাগত লোকজন এসে তা ব্যবহার করে। তবে বড় বড় ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম সেগুলো চালু থাকবে।’
সিইসি বলেন, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করবেন কিন্তু সেটা সহনশীল পর্যায়ে। এই নির্বাচন উপলক্ষে কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তির জীবন চলে গেছে। এভাবে সংঘাত সংঘর্ষে জীবন চলে যাবে এটা হতে পারে না। নির্বাচন উৎসবমুখর হওয়ায় মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের ধন্যবাদ জানান সিইসি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে সিইসি বলেন, আপনাদের কাছে একজন প্রার্থীর পরিচয় সে প্রার্থী। সে কোন দলের, মতের, গোত্রের সেটা পরিচয় নয়। প্রত্যেককে তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় আইনি সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।
বাসায় গিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানির বিষয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিষ্প্রয়োজনে হয়রানি করছে এমন কোন অভিযোগ আমাদের নেই। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে এবং আদালতের ওয়ারেন্ট আছে অবশ্যই পুলিশ তো তাদের গ্রেফতার করার জন্য চেষ্টা করতে পারে। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাদের অভিযান নেই।’
রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘শনিবার পর্যন্ত জমা পড়া ৫৬টি অভিযোগের মধ্যে ৩৫টি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বাকিগুলো তদন্তনাধীন।’
চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন মামলার আসামিদের চসিক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না সেটার একটা আইন আছে। যদি কোনো অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে সে অপরাধী না। একটা লোক যদি অপরাধী বা আসামি হয়ে থাকে তাহলে সে অপরাধে তাকে আমরা নির্বাচন থেকে বাদ রাখতে পারি না। কারা প্রার্থী হতে পারে সেটার কতগুলো বিধান আছে। যদি কেউ দুই বছরের শাস্তি পান তাহলে তাহলে তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা হয়। পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারে না এটা হলো নিয়ম।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার রশিদুল হাসানসহ র্যাব, আনসার, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।