প্রবাসীরা অভিযোগ করে বলছেন, গত বছর দালাল ও এজেন্ট কর্তৃক প্রতারিত হয়ে বৈধতার সুযোগ হারিয়েছেন, খুঁইয়েছেন পাসপোর্টও। যেহেতু এ বছর ভেন্ডর বা এজেন্ট নিয়োগ না দিয়ে মালিক কর্তৃক বৈধতার সুযোগ দিয়েছে। প্রতারণাও হবে না বলে আশা করছেন প্রবাসীরা। তবে সময় মত পাসপোর্ট হাতে না পেলে এবারও বৈধতার সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাবে বলে শংকায় রয়েছেন প্রবাসীরা। এ সুযোগে প্রবাসীদের হাতে দ্রুত পাসপোর্ট বিতরণের জন্য মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের আহবায়ক রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ জানিয়েছেন। অনুরোধের প্রেক্ষিতে আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী।
এ দিকে মালয়েশিয়ায় করোনা মহামারির কারণে চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে দেশটিতে চলছে টানা লকডাউন। সরকার বাধ্যতামূলক আরোপ করেছে স্বাস্থ্য, সামাজিক দূরত্ব ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ।
সব নীতিমালা অনুসরণ করে ছুটির দিনসহ দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা অবিরাম দিন রাত কাজ করে করোনাকালীন সময়েও প্রায় এক লাখ পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। যাতে করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কর্মক্ষেত্রে সঠিক সময়ে ভিসা রিনিউ করতে পারেন।
সূত্রমতে, সিএমসিও এবং এসওপি নির্দেশনা মেনে প্রতিদিন ১৩শ পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে এবং প্রতিদিন প্রায় ১৫শ নতুন পাসপোর্টের আবেদন এন্ট্রি করা হচ্ছে।
এ ছাড়া পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও অন্যান্য সেবা নিয়মিত দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় সরকারি ছুটি শনিবার ও রোববার দূতাবাসের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রবাসীদের দ্রুত পাসপোর্ট সেবা নিশ্চিত করতে পাসপোর্ট সার্ভিস শাখায় কর্মরত সংশ্লিষ্টরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
এ দিকে গত নভেম্বর থেকে দেশটিতে শুরু হয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া রিক্যালিব্রেশন নামে বৈধকরন প্রক্রিয়া। এই বৈধকরণ পক্রিয়ায় বৈধ হতে নতুন পাসপোর্টের আবেদন বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ। প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাতে দ্রুত পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে পাসপোর্ট কার্যক্রম সময়োপযোগী করতে এ্যানালগ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার সরকার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম এসওপি ঘোষণার মাধ্যমে অধিক গণজমায়েতকে নিষিদ্ধ করেছে। তবুও প্রবাসীদের পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দূতাবাসের কর্মীরা পাসপোর্ট বিতরণ করে যাচ্ছে।
বিদেশি দূতাবাসের মধ্যে একমাত্র মালয়েশিয়া ডাকযোগের মাধ্যমে পাসপোর্ট এপ্লিকেশন রিসিভ সিস্টেম চালু রেখেছে। পাসপোর্ট ডেলিভারিতে অনলাইন বুকিং সিস্টেম পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোন সমস্যা সমাধানের বিষয়টি সহজতর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাসপোর্ট এন্ড ভিসা শাখার প্রধান মো. মশিউর রহমান তালুকদার জানান, মালয়েশিয়া সরকার একটানা লকডাউন ঘোষণার পাশাপাশি কন্ডিশনাল মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (সিএমসিও), স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম (এসওপি) জারি করে রেখেছে। এসব সরকারি বিধিমালা অনুসরন করে পাসপোর্ট সার্ভিস স্বাভাবিক রাখা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। মশিউর রহমান বলেন, প্রবাসীরা তাদের কর্মক্ষেত্র স্বাভাবিক ও নিবিড় করতে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং দ্রুত পাসপোর্ট ডেলিভারিতে দূতাবাস আন্তরিক ভাবে কাজ করছে।
মালয়েশিয়ায় নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সারওয়ার অভিবাসী দিবসে তার বক্তব্যে বলেন, পাসপোর্ট দ্রুত ডেলিভারি দিতে ইতোমধ্যে হাইকমিশনে ৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আরো নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মালয়েশিয়া পোস্ট অফিসের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে যাতে করে পাসপোর্ট মালয়েশিয়া দূর-দূরান্তে কর্মরত কর্মীদের সহজে পৌঁছে দেওয়া যায়।
বৈধকরণ নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, রিক্যালিব্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিয়োগদাতা বা মালিক নির্ভর। না জেনে না বুঝে কারও সঙ্গে আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে অভিবাসী দিবসে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রবাসীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান তিনি।