চট্টগ্রামে এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুল ও ব্যবসায় সমান পার্টনার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে প্রতারনার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি এক ব্যবসায়ী।
সকালে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার সুলতান মার্কেটের নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন। বায়েজিদ ফ্রি ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ মো. মাজহারুল হক এমন প্রতারনা করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ব্যবসায়ী জসিম।
লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগি জসিম বলেন, বায়েজিদ ফ্রি ক্যাডেট স্কুল এবং সুলতান মার্কেটের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ তলার ফ্লোরের সমান অংশিদারিত্ব দেয়ার কথা বলে কয়েক দফায় প্রায় তিন কোটি হাতিয়ে নেন অধ্যক্ষ মাজহারুল হক। নিজের ব্যবসায়ীক দোকান ও সহায় সম্বল বিক্রি কওে কয়েক দফায় ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দেয়ার পর হতে গত ১১ বছরে ব্যবসার অংশিদারিত্ব পাওয়া তো দুরের কথা বিনিয়োগকৃত অর্থেও কোন ধরনের লভ্যাংশও পাননি তিনি। বরং বিনিয়োগের মূল অর্থ ফেরত চাওয়ায় বর্তমান প্রশাসনের মাধ্যমে তাঁকে সেখান থেকে উচ্ছেদসহ প্রান নাশের হুমকি দিচ্ছেন মাজহারুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে জসিম বলেন, বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় দীর্ঘদিন ব্যবসা করার সুবাধে পূর্ব পরিচয় ছিল অধ্যক্ষ মাজহারের সাথে। ২০১১ সালে বায়েজিদ বোস্তামি দরগাহ শরীফ ওয়াকফ এস্টেট পরিচালনা কমিটি থেকে সুলতান মার্কেটের প্রথম তলা দালানের উপর নিজ খরচে ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ তলা ভবন নির্মানের চুক্তি করেন অধ্যক্ষ মো. মাজহারুল হক। চুক্তি অনুযায়ী উক্ত ভবনের দ্বিতীয় তলায় বায়েজিদ ফ্রি ক্যাডেট স্কুল পরিচালনা এবং বাকী ফ্লোর গুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করবেন। ওয়াকফ এস্টেট পরিচালনা কমিটির সাথে এটি ছিল মূলত একটি ভাড়ার চুক্তি।
এসময় পূর্ব পরিচয়রের সুত্র ধরে অধ্যক্ষ মাজহারুল হক উক্ত ভবনে ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ তলা ভবন নির্মান এবং স্কুল পরিচালনাসহ বানিজ্যিক দোকান পরিচালনার জন্য জসিমকে পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব করেন। মাজহারুল হকের কাছে তখন ভবন নির্মান করার জন্য টাকা না থাকায় তিনি এখাতে টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন। এ জন্য তিনি তার পূর্ব পরিচিতি দুইজন ব্যক্তি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. আনিছুর রহমান মিঞা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও উন্নয়ন) মো. খালেদ মামুন চৌধুরী নামে দুই ব্যক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। কথিত এই দুই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমাকে মাজহারুল হক তাদের আত্মীয় দাবী করে তার সাথে টাকা বিনিয়োগে পরামর্শ দেন। একাজে বায়েজিদ এলাকার ব্যবসায়ী ইলিয়াছ হোসেনও মাজহারের পক্ষ নিয়ে টাকা বিনিয়োগের জন্য জসিমকে সুপারিশ করেন। সকলের কথায় সরল বিশ্বাসে ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগে সম্মত হন জসিম। কথা অনুযায়ী প্রথমে এক কোটি টাকা বিনিয়োগের অংশ থেকে ২০১১ সালের ২ জুন ৬ লাখ টাকা মাজহারুল হককে চেক মুলে প্রদান করা হয়। এসময় এক কোটি টাকা বিনিয়োগ বাবদ প্রথম কিস্তির একটি প্রাপ্তি স্বীকার পত্র লেখা হয় যাতে উল্লেখ করা হয় জসিমের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ এ টাকা নিচ্ছে। এ প্রাপ্তি স্বীকার পত্রে উক্ত কথিত দুই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াছও স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন। এর পর জসিম তাকে বিভিন্ন তারিখে চেক মুলে দফায় দফায় সর্বমোট ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা প্রদান করেন। জসিমের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মাজহারুল উক্ত ভবনে স্কুল ও দোকান নির্মান করেন। এর মধ্যে ২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে মাজহারুল হক জসিমকে ২য় তলার ফ্লোর বুঝিয়ে দেয়ার সময় ভবনের মূল মালিক পক্ষের সাথে চুক্তিপত্র করতে হবে বলে কয়েটি অলিখিত স্টাম্পে জসিমের স্বাক্ষর করিয়ে নেন। বিনিয়োগের সমান অংশিদারিত্বের চুক্তি মতে ২য় তলার ফ্লোরে ১৯টি দোকান ঘর নির্ধারন করে সেখানে আমার নিজ প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা দোকানের সার্টার, পার্টিশান ওয়াল নির্মান ও ফ্লোওে টাইলস লাগানো, বৈদ্যুতিক সংযোগসহ বিভিন্ন কাজে ব্যয় করা হয়। এর মধ্যে ৮ টি দোকান বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জসিমের মাধ্যমে লাগিয়ত করে টাকা গুলো মাজহারুল হক নিয়ে যান। ভবনের ২য় তলার ফ্লোর বুঝিয়ে দেয়ার পর থেকে অধ্যক্ষ মাজহারুল হক ১৯ টি দোকানের মালিকানা ভাড়া বাবদ ২০১৩ সালের নভেম্বর হতে ২০২১ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত বিনা রশিদে ৩০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা গ্রহন করেন।
সরল বিশ্বাসে বিপুল পরিমাণ এসব অর্থ বিনিয়োগ করা হলেও জসিমের সাথে লিখিত কোন চুক্তিপত্র করেননি ধূর্ত মাজহার। চুক্তির কথা বললে মাজহার বলতেন শেয়ার হোল্ডার নেয়া হয়েছে জানলে ভবনের মূল মালিক তথা ওয়াকফ এস্টেট কর্তৃপক্ষ ইজারা বাতিল করবে। তাই সব কিছু গোপন রাখতে হবে । কিন্তু সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে মাজহারুল হকের আসল রুপ ধরা পড়ে। তখন জসিম তাঁর বিনিয়োগকৃত টাকার সমান ভাগ এবং স্কুলের বিগত সময়ের আয় ব্যায়ের হিসাব চাইলে তিনি আজ দেবেন কাল দেবেন বলে সময় ক্ষেপন করতে থাকে।
সর্বশেষ গত ২৭ নভেম্বর কোন ধরনের চুক্তিপত্র দেয়াসহ বিনিয়োগকৃত টাকা ও লভ্যাংশ দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। উল্টো প্রশাসনের মাধ্যমে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্ছেদের হুমকি প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে জসিমকে বায়েজিদ থানা পুলিশ কোন প্রকার মামলা ছাড়া আটক করে থানায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে আটকে রেখে থানার ওসি কামরুজ্জামান ও দারোগা রবিউল জসিমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালি করে দোকানের দখল ছেড়ে দিতে বলে। পরের দিন ওসির নির্দেশে পুলিশ মার্কেটে এসে ভাড়াটিয়াদেরকে জসিমকে দোকানের ভাড়া না দিতে বলে যান।
বর্তমানে অধ্যক্ষ মাজহারুল হক পুলিশের সহায়তায় জসিমকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে।
সরল বিশ্বাসে অর্ধেক শেয়ারের অংশ পাওয়ার আশায় প্রায় ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন অনেকটা নিঃস্ব জসিম। বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত চাওয়ায় প্রাননাশের হুমকিসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছে মাজহার।
এ দিকে এ ঘটনায় গত ৩ জানুয়ারী মাননীয় সিনিয়র সহকারী জজ ৫ম এর আদালতে একটি চিরস্থাীয় নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা হয়। আদালত শুনানী শেষে বিবাদীর প্রতি সমন জারি করেছে।